মশার সঙ্গে বেড়েছে ব্যাটের দাম
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রাজধানীতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মশা। ক্ষুদ্র এ প্রাণীর কামড় ও অত্যাচারী গুনগুনানিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। জরিপেও উঠে এসেছে এমন তথ্য। বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ঢাকায় কিউলেক্স মশা বেড়েছে প্রায় চারগুণ। সবমিলিয়ে, মশার যন্ত্রণায় নাকাল রাজধানীবাসী।
নগরের বাসিন্দারা বলছেন, ঢাকার প্রায় সব এলাকায় এখন মশাদের রাজত্ব। দিন-রাত সব সময়ই মশার অত্যাচার। গত কয়েক বছরে এত মশার উৎপাত দেখা যায়নি। এ অবস্থায় মশা ঠেকাতে কয়েল জ্বালিয়ে, অ্যারোসল দিয়েও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন অনেকে। জ্বলন্ত কয়েলের ধোঁয়ার মধ্যেই ঘুরছে মশা। দিনের বেলায়ও মশারি টানাতে হচ্ছে অনেককে।
এ অবস্থায় মশারি, কয়েল, স্প্রের পাশাপাশি মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট বা মসকিউটো র্যাকেটের চহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার বড়-ছোট দোকানেও এই মশা মারার ব্যাট আগের চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানগুলো (এমন পণ্য পাওয়া যায়) ঘুরে দেখা গেছে, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এসব মশা মারার ব্যাট বিক্রি বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদার মাত্রা দেখে প্রতিটি দোকানদাররা পাইকারি বাজার থেকে তুলনামূলক বেশি করে কিনে এনে পর্যাপ্ত মজুত রাখছেন এটি। সেই সঙ্গে আগের দামের চেয়ে বেশি দামে ব্যাটগুলো বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কথা হয় গুলশান বাড্ডা লিংক রোডের দোকানদার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণে মশা বেড়েছে। মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী এখন মশা মারার উপকরণের জন্য দোকানে ভিড় করছেন। কয়েল, অ্যারোসল ও মশারিও কিনছেন। কিন্তু মশারির ভেতরে তো আর সব সময় থাকা যায় না। তাই মশার ব্যাট কিনতে ভিড় করছেন মানুষ। আগে সারা দিনে দুয়েকটি মশার ব্যাট বিক্রি হলেও এখন দিনে ৪-৮ ব্যাট বিক্রি করছি। মশা থেকে বাঁচতে মানুষ প্রতিদিনই ব্যাট কিনতে ভিড় করছেন দোকানগুলোতে।’
দামের বিষয়ে এ দোকানি বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব মশার ব্যাট পাওয়া যায় এর সিংহভাগই চীনের। আগে যে ব্যাট বিক্রি হতো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, এখন সেটা এক দাম ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজার থেকেও আগের চেয়ে বেশি দামে এই ব্যাটগুলো কিনতে হচ্ছে। ভালোমানেরও বেশি কিছু মশার ব্যাট পাওয়া যায়। যেগুলো ৫০০-৭০০ বা এর বেশি দামেও বিক্রি হয়। কিন্তু সেগুলো তুলনামূলক কম বিক্রি হয়, তাই বেশিরভাগ দোকানি সেগুলো রাখেন না।’
রাজধানীর রামপুরার একটি ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির দোকানে এসে মশা মারার এ যন্ত্রের দরদাম করছিলেন ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কয়েল জ্বালিয়ে রাখলেও মশা ধোঁয়ার মধ্যে ঘুরে। মশার কয়েল বা অ্যারোসল দিলে বাচ্চাদের কষ্ট হয়। ইদানীং মশার অত্যাচার মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে, মশা থেকে রক্ষা পেতে তাই বাধ্য হয়ে ব্যাট কিনতে এসেছি। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় মশা মারার ব্যাটের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। আগে যেসব ব্যাট ২৫০ টাকায় পাওয়া যেত, সেগুলোর দাম এখন ৩৫০ টাকা। একটুও কম রাখছে না দোকানিরা। তারা ভাবছেন, যেহেতু মশা বেড়েছে সবই তো বিক্রি হবে। চাহিদাও থাকবে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা।’
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম ফুটপাত থেকে ২০০ টাকায় একটি মশা মারার ব্যাট কিনেছেন। তবে সেটি ৪/৫ দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মশা বাড়ার কারণে মশা মারার ব্যাটের খুব বেশি চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাড়া-মহল্লাসহ বড়-ছোট প্রায় সব দোকানে এখন মশা মারার ব্যাট পাওয়া যাচ্ছে, সেই সঙ্গে দামও বেশি। পাশাপাশি প্রতিটি ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে এসব মশা মারার ব্যাট। কিন্তু বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে এসব ব্যাট ফুটপাতে বিক্রি হলেও মান খারাপ এসবের। ২০০ টাকা দিয়ে একটি কিনে আমারটা ৪/৫ দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা আগের বছরের মালগুলো তুলনামূলক একটু কম দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন।’
এএসএস/এফআর/এমএমজে