ফুটপাতে জমে উঠেছে শীতবস্ত্রের বাজার
কার্তিক মাসের শেষে দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরের জেলাগুলোকে স্পর্শ করেছে শীতের আগমনী হিমেল হাওয়া। তবে শহরাঞ্চল বা রাজধানীতে ঠান্ডার তেমন আমেজ এখনও লাগেনি। কিন্তু শেষরাতের শীতল আবহাওয়ায় গায়ে কাঁথা বা চাদর জড়াতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকেও। সেই সুবাদে ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে শীতবস্ত্রের বাজারগুলো। বিপনিবিতান বা মার্কেটে এখনও তেমন আয়োজন চোখে না পড়লেও ফুটপাতগুলোতেই শুরু হয়েছে শীতের কাপড়ের আগাম বেচাকেনা। দিনের শুরু থেকে রাত অবধি ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান।
শনিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সায়েন্সল্যারেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও মিরপুর রোডের আশপাশের ফুটপাতে দেখা যায় এমন চিত্র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আর্থিকভাবে সচ্ছল ক্রেতারা যেমন আসছেন তেমনি স্বল্প আয়ের মানুষেরাও অল্প দামে শীতবস্ত্র কিনতে ফুটপাতের এসব দোকানে ভিড় করছেন। শীতের চাদর, জ্যাকেট, সোয়েটার, মোটা কাপড়ের গেঞ্জি, হুডি, মাফলার, পুরোনো কমফোর্টার, হাতমোজা, কানটুপিসহ সবধরনের শীতবস্ত্রই মিলছে এসব দোকানে। কোনো কোনো দোকানী আবার সাজিয়ে বসেছেন শুধুই শিশুদের শীতের কাপড়।
সায়েন্সল্যাবরেটরি এলাকায় ফুটপাতে শীতবস্ত্র বিক্রি করেন হকার আসাদুল। তিনি বললেন, সারা বছর ফুটপাতেই কাপড় বিক্রি করে সংসার চালাই। শীত আসার আগে প্যান্ট-গেঞ্জি বিক্রি করি। এখন যেহেতু সামনে শীতের মৌসুম তাই শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু করেছি। গতবছরের অবিক্রীত কাপড়গুলোই এখন আগাম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দামও কম নিচ্ছি। কারণ গোডাউন খালি করার জন্য মহাজনরা স্টক ক্লিয়ারেন্স সেল দিচ্ছেন। তবে এবছর নতুন করে যেসব কাপড় আসবে সেগুলোর দাম আগের তুলনায় বেশি হবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন কাপড়ের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে পুরোনো শীতের কাপড়ও। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সোয়েটার ও হুডি। দেশে তৈরি ছোটবড় শাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকায়।
তবে পুরোনো কাপড়ের দাম একেবারেই সস্তা হওয়ায় নিম্নবিত্তের মানুষের কাছে এই কাপড়ের চাহিদা অনেক বেশি বলেও জানান তিনি।
নিউমার্কেটের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে ভ্যান গাড়িতে সুর করে ডাক তুলে সুয়েটার বিক্রি করতে দেখা যায় জুয়েল রানা নামের এক বিক্রেতাকে। বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, একদাম একরেটে সোয়েটার বিক্রি করছি। অল্প দামে ভালো মানের পোশাক দিচ্ছি। এখন এসব সোয়েটার যে দামে পাওয়া যাচ্ছে ডিসেম্বরের শুরুতেই তা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলোতে ক্রেতারা বেশি দামে জিনিস কিনে আর ফুটপাতে এলেই দামাদামি শুরু করে। সেজন্যেই আমি এক দামে বিক্রি করছি। তাতে কারো পোষালে নেবে না পোষালে নেই।
এদিকে শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কম দামে পোশাক কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। শেফালী আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, শাড়ি কেনার জন্য নিউমার্কেটে এসেছিলাম। এখন দেখি শীতের কাপড়ও ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরুতে বাড়িতে যাব তাই পছন্দ করে একটা চাদর, সোয়েটার আর কানটুপি কিনেছি। দাম মোটামুটি আগের মতোই মনে হচ্ছে। আসলে এখনও শহরে শীতের তেমন প্রভাব লাগেনি তাই চাহিদাও হয়তো এতটা নেই। এই মাসের মাঝামাঝি বা ডিসেম্বরের শুরুতে বোঝা যাবে কাপড়ের দাম স্বাভাবিক আছে নাকি বেড়েছে।
মার্কেটের ভেতরের দোকানের তুলনায় বাইরের ফুটপাত বা দোকানগুলোতে শিশুদের শীতের কাপড়ের দাম অনেকটাই কম বলে জানালেন রাইসুল-মনিরা নামের আরেক ক্রেতা দম্পতি। তারা বললেন, মার্কেটের কয়েকটি দোকানে ছোট বাচ্চাদের শীতের কাপড়ের সেট (সোয়েটার, গেঞ্জি, পাজামা, কানটুপি, হাতমোজা, পা মোজা) আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ দাম চাওয়া হচ্ছে। সেই তুলনায় বাইরের দোকানগুলোতে দাম অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে শীতের মৌসুম শুরু হলে বাজারে কাপড়ের চাহিদা ও সরবরাহ বাড়লে দাম ক্রেতার নাগালে আসবে বলেও আশা এই দম্পতির।
শীত পোশাকের বাজার ধরতে মরিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ীরা
অপরদিকে শীতকে সামনে রেখে থেমে নেই মার্কেট, বিপনিবিতান ও বিভিন্ন শোরুমের ব্যবসায়ীরা। মার্কেট ও শো-রুম গুলোতে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। আসন্ন শীতে পোশাকের বাজার ধরতে মরিয়া হয়ে আছেন তারা। দোকানগুলোতে বাড়ানো হচ্ছে শীতের পোশাক। নতুন করে সাজানো হচ্ছে দোকান। দোকানগুলোতে এখন স্থান পাচ্ছে চামড়ার জ্যাকেট, ব্লেজার, রেডিমেট স্যুট, সাফারি, কুটি, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চাদর,ওয়ান ক্লাস মানের হুডি। এ ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তরুণ-তরুণীদের পছন্দকে।
ডিসেম্বরের শুরুতেই স্টাইলিশ আর আনকমন পণ্যের নানা বাহারি পোশাকে এসব দোকানে ভরে উঠবে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেটের নূরজাহান সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, শীতের শুরুর দিকের ক্রেতাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছেন তরুণ-তরুণী। তারা সবসময়ই আনকমন ডিজাইনের পোশাক পছন্দ করেন। আর ঢাকায় শীত কম থাকায় হালকা পোশাকের চাহিদা বেশি। এসব বিষয়াদি লক্ষ্য রেখেই আমরা দোকান সাজাচ্ছি।
আবু সাঈদ নেসারী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, শীত মৌসুমকে ঘিরে কমবেশি সব কাপড় ব্যবসায়ীদেরই বড় ধরনের একটি ইনভেস্ট থাকে। তবে এ বছর আমরা আঁচ করতে পারছি গতবারের তুলনায় কাপড়ের দাম অনেক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বিদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারেও অস্থিরতা বেড়েছে। মনে হচ্ছে সেই প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়বে। তবুও আমরা আশাবাদী যে, এবছরও ভালো ব্যবসা হবে।
আরএইচটি/এমএ