পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ সংকট কাটছে
বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ঠিকাদারের পাওনা দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করা হচ্ছে। পুরো প্রকল্পে অর্থের কোনো সংকট নেই। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (আরএডিপি) এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) গত সাত মাসের কাজের বিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পায়নি বলে দাবি করছিল। এই কারণ দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছিল, বিল না পাওয়ায় কাজের গতি কম হচ্ছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। কোনো সংকট নেই। প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে।
এ বিষয়ে বুধবার (৩ মার্চ) বিকেলে প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছিলাম। তা পাচ্ছি। কোনো সংকটই এখন নেই। আমরা ঠিকাদারদের পাওনা অর্থ পরিশোধ করব সহসাই। এটা এখন প্রক্রিয়ার বিষয়। তবে সময় বেশি লাগবে না।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৯ শতাংশের বেশি। মূল পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা অংশে ট্রেন চলাচল যাতে করতে পারে, সেজন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই অংশে কাজ হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
মূল পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। পদ্মা সেতু সংযোগ প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়ন করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ হবে প্রকল্পের আওতায়।
পদ্মা সেতু আগামী বছরের জুনে চালু করার লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। দোতলা পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে রেলপথ স্থাপনের জন্য কাজ চলছে। পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিন থেকেই মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে ট্রেন চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় একটি রেলজংশন ও তিনটি রেলস্টেশনের নকশা পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এজন্য উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের অধীনে নির্মিতব্য রেলপথে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত মাওয়া ও জাজিরা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন ও নড়াইল রেলস্টেশনের অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করা হবে। এগুলোকে আইকনিক রেলস্টেশন হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়বে পুরো প্রকল্পের। এর মধ্যে ভাঙ্গা আইকনিক রেলজংশন নির্মাণে ব্যয় বাড়তে পারে ২৮০ কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রকল্পের কাজ আন্তর্জাতিক মান অনুসারে করতে চাইছি।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই ব্যয় আরও বাড়বে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প ছক অনুমোদন হলে। প্রকল্পে যে ব্যয় হবে তার ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে চীন। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ হবে প্রকল্পের আওতায়। থাকবে মোট ১৭টি রেলস্টেশন। এর মধ্যে ১৪টি রেলস্টেশন নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।
১৭টি রেলস্টেশনের জন্য প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৩৬ কোটি ৬১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। একটি রেলজংশন ও তিনটি রেলস্টেশনের নকশা পরিবর্তন হলে মোট ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রেলভবনে অনুষ্ঠিত সভায় ভাঙ্গা জংশনকে আধুনিক চীনা স্টেশনের মতো নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এই স্টেশনে থাকবে সংরক্ষিত আলাদা প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ। থাকবে আলাদা ফুড কোর্ট, আধুনিক বিপণিবিতান। থাকবে লিফট, চলন্ত সিঁড়ি, সাধারণ সিঁড়ি ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সেতু। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এগুলো পরিকল্পনা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত করা হবে দ্রুত।
উল্লেখ্য, স্বপ্নের সেতুর ৪১তম স্প্যান বসার মধ্য দিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্ত হয়েছে প্রমত্তা পদ্মার দুই পাড়। ২০২২ সালের শুরুতেই সেতু দিয়ে যান চলাচলের কথা ছিল। তবে অপেক্ষার প্রহর আরও বাড়তে পারে। করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না সেতুর কাজ।
এখনও সেতুর আরও কিছু কাজ বাকি আছে। যেমন-রোডওয়ে স্ল্যাব, রেলওয়ে স্ল্যাব, সুপার-টি গার্ডার বসানো। স্ল্যাবের ওপর পিচ ঢালাইয়ের কাজ, আলোকসজ্জা, ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজও করতে হবে।
বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে স্বপ্নের এ সেতুর মাধ্যমে।
পিএসডি/এইচকে/এমএমজে