কাস্টমস কর্মকর্তা-পরমাণু বিজ্ঞানী পরিচয়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ
নকল সোনার বার, ম্যাগনেটিক পিলার ও কয়েন বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন বশার মোল্লা (৫৩), শেখ সোহাগ হোসেন মিন্টু (৩৩), দ্বীন মোহাম্মদ (৪১), জুয়েল শিকদার (৪৬), কথিত ডাক্তার মোজাম্মেল খান ওরফে আকাশ (৪০), শেখ আলী আকবর (৫৭), জামাল ফারাজী (৫৫), সোহেল শিকদার (৩০), বিল্লাল হোসেন (৩২) এবং শাহরিয়ার ইকবাল (২৫)।
রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়িচুরি প্রতিরোধ টিম।
>>টাকা দিয়ে না পেয়ে নিজেই জাল নোট তৈরি শুরু করেন
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, নকল সোনার বার, নকল ম্যাগনেটিক পিলার ও কয়েন প্রতারণার জন্য ভুয়া পরিচয় দিতেন কারবারি চক্রের সদস্যরা। কেউ কাস্টমস কর্মকর্তা, কেউ পরমাণু বিজ্ঞানী কেউ বা আবার মেজর পরিচয়ে দিয়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রের সদস্যরা।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, ডিএমপি’র দক্ষিণ গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়।
তিনি বলেন, ভাটারা থানা ও বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা দুটি মামলা তদন্তকালে এক নারী ভুক্তভোগীর সন্ধান পাই। তিনি নিজে এই চক্রের ভুক্তভোগী। তিনি তার ভাটারা ও বসুন্ধরা এলাকার দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে প্রতারক চক্রকে টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ এই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
>>শান্তিরক্ষী মিশনে নিহতের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কোটি টাকা প্রতারণা
গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত হতে নকল চারটি সোনার বার, সোনার বার তৈরির মেশিন, তামার তার, তার গলানোর কমিক্যাল, হিউম্যান রাইটসের নকল আইডি কার্ড এবং সিভিল এভিয়েশনের নকল আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে সঞ্জিব কুমার রায় বলেন, গ্রেপ্তাররা নকল সোনার বার, ম্যাগনেটিক পিলার ও কয়েন, কাস্টমসে মালামাল বিক্রির সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তার বশার মোল্লা নিজেকে কাস্টমস ডিরেক্টরের এপিএস হিসেবে পরিচয় দিয়ে কম দামে স্বর্ণের বার ক্রয় করে দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতেন।
গ্রেপ্তার শেখ সোহাগ হোসেন মিন্টু নিজেকে কাস্টমস ডিরেক্টর অ্যাডমিন হিসেবে ক্রেতার সঙ্গে দেখা করে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। গ্রেপ্তার দ্বীন মোহাম্মদ ও জুয়েল শিকদার স্বর্ণকার হিসেবে নকল সোনার বার তৈরি করেন। গ্রেপ্তার কথিত ডাক্তার মোজাম্মেল খান নিজেকে ক্যামিস্ট ও পরমাণু বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিতেন।
গ্রেপ্তার শেখ আলী আকবর নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর হিসেবে পরিচয় দেন। গ্রেপ্তার জামাল ফারাজী, সোহেল শিকদার, বিল্লাল হোসেন এবং শাহরিয়ার ইকবাল উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে ক্রেতা যোগাড় করে পরমাণু বিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যেতেন। ম্যাগনেটিক পিলার, কয়েন ও সোনার বার পরীক্ষা করে সঠিক আছে কিনা রিপোর্ট দেন কথিত পরমাণু বিজ্ঞানী।
সঞ্জিব কুমার বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা একেক জন একেক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ম্যাগনেটিক পিলার, কয়েন ও সোনার বার সরবরাহ করার কথা বলে সুকৌশলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
>>কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশিদের ‘সাইবার দাস’ বানাচ্ছে বাংলাদেশিরাই!
তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা শুধু ভুয়া পরিচয়ই দেননি, তারা ভুয়া আইডি কার্ড প্রদর্শন করতেন। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা স্বনামধন্য হোটেলে পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে লাক্সারিয়াস প্রাইভেটকার ব্যবহারে সেখানে যান। সেখানে পার্টিতে চক্রেরই সদস্যকে ক্যামিস্ট ও পরমাণু বিজ্ঞানী পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি স্বর্ণের বার, ম্যাগনেটিক পিলার ও কয়েনের সঠিকতা তুলে ধরে দাম নির্ধারণ করতেন।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানা, দক্ষিণখান থানা, উত্তরা পূর্ব থানা, কাশিমপুর থানা ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানায় একাধিক মামলা রয়েছে উল্লেখ করে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুরোধ, অতি লোভে বা অধিক মুনাফার লোভে পড়ে অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কাউকে নিজের অর্থ তুলে দিবেন না। প্রতারক চক্র সম্পর্কে কোনো তথ্য পেলে প্রাথমিক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করুন। আমরা সর্বোচ্চ আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসব, যাতে করে নতুন করে আর কেউ চক্রের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে সব না হারান।
জেইউ/এমএ