আগে কয়েদি, তারপর হাজতিরা পাবেন করোনার টিকা
দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি একমাস অতিক্রম করেছে। ইতোমধ্যে ৩৩ লাখেরও বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন আর ৪৫ লাখ মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এবার টিকা পেতে যাচ্ছেন কারাবন্দিরা। তবে কারাগারে কর্মরতরা স্থানীয়ভাবে টিকা পেয়েছেন।
কারা অধিদপ্তর বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দিদের টিকা দেওয়া হবে। বন্দিদের টিকা দেওয়ার জন্য অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই চিঠি যাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে টিকা পেলেই কারাবন্দিদের টিকা দেওয়া শুরু হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাবন্দিদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছি। টিকা দেওয়ার জন্য কয়েকটি কারাগারও আমরা নির্ধারণ করেছি। আশা করছি দ্রুতই কারাগারে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর কারাগারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২৮ জন কয়েদিকে টিকা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এ টিকা তাদের দেওয়া হয়েছে।
যারা আগে টিকা পাবেন
মন্ত্রণালয় থেকে টিকা হাতে পাওয়ার আগেই এ কার্যক্রমের প্রস্তুতি শুরু করেছে কারা অধিদপ্তর। কোন কোন কারাগারের বন্দিদের আগে টিকা দেওয়া হবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে চল্লিশোর্ধ কয়েদিদের (বিচারের রায় হওয়া দণ্ডিত) টিকা দেওয়া হবে। এরপর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্যান্য বয়সের কয়েদিরা পাবেন। দ্বিতীয় ধাপে হাজতিদের (যাদের মামলা এখনো বিচারাধীন) টিকা দেয়া হবে।
দেশের ৬৮টি কারাগারে বর্তমানে ৮৩ হাজার ৫০৫ জন কারাবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি (কয়েদি) ১৭ হাজার ২২৬ জন। আর বাকিরা বিচারাধীন বন্দি (হাজতি)। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েদিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বয়সের ক্রম অনুসারে কয়েদিদের টিকা দেওয়া হবে। একই ক্রম অনুসারে হাজতিদেরও টিকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ যার কারাগারে থাকার মেয়াদ যতো বেশি তার নাম তালিকায় তত আগে আসবে।
টিকা নিচ্ছেন কারাগারে কর্মরতরা
এদিকে কারাবন্দিদের টিকা দেওয়া কার্যক্রম শুরু না হলে কারাগারে কর্মরতরা টিকে নেওয়া শুরু করছেন। এখন পর্যন্ত কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৪১ কর্মী করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাবন্দিদের টিকা দেওয়ার নির্দেশ আমাদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারা অধিদপ্তর হয়ে আসবে। আমাদের কাছে এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দেশ আসেনি। তবে আমার জানা মতে, এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যারা স্টাফ আছে তারা স্থানীয়ভাবে টিকা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের ৪১ জন স্টাফ টিকা নিয়েছে। প্রতিদিন ১৫ জন করে যাচ্ছেন এবং টিকা নিয়ে আসছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দিকে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হলেও এখন চল্লিশোর্ধ যে কেউ রেজিস্টেশন করে টিকা নিতে পারছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়েছেন ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে নারী ১১ লাখ ৯১ হাজার ১৫০ জন।
করোনা মোকাবিলায় কারাগারের যত উদ্যোগ
করোনার সংক্রমণ রোধে দেশের কারাগারগুলোতে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারাসূত্র জানায়, আগে একজন বন্দি ১৫ দিনে ১ বার তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারতেন। তবে সমাগম এড়াতে বর্তমানে মাসে একবার বন্দিদের এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও যারা কারাগারে আসছেন তাদেরকে প্রথম রাতে আলাদা রাখা হচ্ছে। পরদিন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে স্বাভাবিক থাকলে সেল বরাদ্দ করা হচ্ছে। এছাড়াও জ্বর হলেই কারাগারের ভেতরের হাসপাতালে পৃথকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের। এছাড়াও কারাগারে বার বার হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এমএসি/এসএইচআর/আরএইচ