কয়েলের ধোঁয়ার তোয়াক্কা করছে না মশা
দিন-রাত বা উচ্চতা, রাস্তা-ঘাট বা ঘর, কিছুতেই কোনো সমস্যা নেই। দলবল নিয়ে পোঁ পোঁ শব্দে রক্তের সন্ধানে সারাক্ষণই চলছে অভিযান। এদিক-সেদিক কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি শেষে শিকার ঠিক করেই ফুটিয়ে দিচ্ছে হুল। এই হলো এখন ঢাকার চিত্র। ক্ষুদ্র মশার উপদ্রবে রীতিমতো অসহায় এ মেগাসিটির মানুষ।
মশা ঠেকাতে কয়েল জ্বালিয়ে, অ্যারোসল দিয়েও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন অনেকে। জ্বলন্ত কয়েলের ধোঁয়ার ওপর দিয়েই ঘুরছে মশা। দিনের বেলাতেও মশারি টাঙাতে হচ্ছে অনেককে।
মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড সংলগ্ন বৈশাখী সরণির বাসিন্দা লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, মশার জ্বালায় বাইরের দিকের জানালা-দরজা বন্ধ রাখতে হয়, বন্ধ থাকার কারণে দিনের আলো বাতাসও কিছুই দেখতে পাই না। বাসায় কয়েল জ্বালাই, অ্যারোসল দিই, তবুও মশার কোনো কমতি নেই। কিছুই কাবু করতে পারছে না মশাদের।
লিয়াকত আলী এক নন, রাজধানীতে হঠাৎ মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তার মতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন আরও অনেকেই। আর মশা তাড়াতে দুই সিটি করপোরেশন এখনও পর্যন্ত যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তা কাজে আসছে না।
রামপুরা এলাকায় বসবাস করেন শারমিন আক্তার। তিনি একজন গৃহিনী। শারমিন আক্তার বললেন, সন্ধ্যা হলে মশা আরও বেড়ে যায়। ছেলে-মেয়েরা পড়তে বসতে পারে না মশার কামড়ে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের মশারির ভেতরে থাকতে হয়। কয়েল দিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না ইদানিং।
গুদারাঘাট থেকে হাতিরঝিলের রাস্তা ধরে কিছুটা এগুলেই বাম পাশে তিতাস রোড। সেখানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন তরুণ। কিন্তু তাদের আড্ডা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। তাদের মধ্যে একজন সঞ্জয় কুমার বলেন, ইদানিং মশার অত্যাচার এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা যায় না, ঘিরে ধরে মশা। সিটি করপোরেশন থেকে মশা মারতে এত আয়োজনের কথা শুনছি, কিন্তু কার্যত এর সুফল তো আমারা পাচ্ছি না। বাসায় তো মশার অত্যাচার আছেই, বাইরে এলেও মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হতে হয়। বন্ধুরা মিলে এখানে দাঁড়িয়েছি কিন্তু মশার যন্ত্রণায় এখানে আর টিকতে পারলাম না।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববীদ কবিরুল বাশার বলেন, রাজধানীতে মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে। এ বছর মশার ঘনত্ব গত বছরের চেয়ে বেশি। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু থেকেই ওয়ার্ডগুলোতে জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে ক্র্যাশ প্রোগাম চালানোর দরকার ছিল।
কী বলছে সিটি করপোরেশন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ডিএনসিসি অনেক বড় এলাকা, পুরো এলকাতেই আমাদের মশক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সব এলাকাতেই আমরা কাজ করছি। তবে অনেক জায়গা যেমন পুকুর, জলাশয়, খালের সব স্থানে আমরা বা আমাদের মশক নিধন কর্মীরা পৌঁছাতে পারেন না। সে কারণে ড্রোনের মাধ্যমে মশার ওষুধ ছেটানোর জন্য ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মশা নিধনে ডিএনসিসি খুবই তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়েদুর রহমান বলেন, আগামী ৮ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত আমরা মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছি। সেই অভিযানে আমরা ড্রোন ব্যবহার করে এর ফলাফল দেখবো। মশক নিধনে আমাদের রুটিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা সব সময় চিন্তা করছি।
গতকাল ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সংস্থাটির ৫ম করপোরেশন সভায় বলেছেন, ৮ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত (শুক্রবার ব্যতীত) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় মশা নিধনে সমন্বিত অভিযান (ক্র্যাশ প্রোগ্রাম) চলবে।
অন্যদিকে কিছু দিনের মধ্যে মশার ওষুধ পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সম্প্রতি বলেছেন, মশার ওষুধ বা কীটনাশকের মান যেন ঠিক থাকে সেজন্য আমরা বারবার পরীক্ষা করাই। বেশি দিন ধরে যদি একটি কীটনাশক বার বার ব্যবহৃত হয় তাহলে সেটা মশার জন্য সহনশীল হয়ে যায়। এজন্য আমরা কীটনাশক পরিবর্তন করে দিচ্ছি, আমরা ইতোমধ্যে নতুন কীটনাশক আমদানি করেছি। আগামী দুই সপ্তাহ পর থেকে নতুন কীটনাশক ব্যবহার করা হবে। আমরা আশাবাদী কিছুদিনের মধ্যে মশা এখন যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
এএসএস/এনএফ