বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী, তবুও কদর নেই মশারির

মশারি টানিয়ে শুতে চান না— এমন লোকের অভাব নেই। এমন অনেকেই আছেন যারা মশার উপদ্রব বাড়লেও শীতের মৌসুম ছাড়া থোড়াই কেয়ার করেন মশারির। গত কয়েক দিনে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বাড়ছে। তবুও কদর বাড়ছে না মশারির।
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মশার উপদ্রবের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও সেই অর্থে বিক্রি নেই মশারির। তবে শীত সামনে রেখে মশারির চাহিদা বাড়তে পারে বলে আশা তাদের।
নিউমার্কেট এলাকায় সুমাইয়া বেডিং স্টোরে গেলে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা মশারির দিকে চোখ পড়ে। দোকানমালিক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, অনেক মানুষই মশারি টানাতে চান না। এখন তো ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। তারপরও মশারির বিক্রি নেই। গত দুই দিনে একটি মশারিও বিক্রি হয়নি। গত সপ্তাহে দুটি বিক্রি হয়েছে।
ইদ্রিসের দোকান থেকে এগিয়ে বেঙ্গল বেডিং স্টোরে গিয়েও দেখা যায়, মশারি সাজিয়ে রাখা। দোকানের কর্মচারী মো. সুমন বলেন, মশা এত বাড়ছে, এত ডেঙ্গু রোগী, তবুও মানুষের হুঁশ নেই। মশারি ছাড়াই ঘুমান। দিন দশেকের মধ্যে পাঁচটার মতো বিক্রি হয়েছে। সামনে শীত, তখন মশারি বিক্রি বাড়তে পারে।
ওই দোকানে মশারি কিনতে আসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরউদ্দিন মাহমুদ। তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কলাবাগানের একটি মেসে থাকেন তিনি। তার রুমমেট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন।
আরও পড়ুন : ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ কেন?
নুরউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মশারি টানাতে বিরক্ত লাগে। বাতাস পাওয়া যায় না, গরমের কারণে ঘুম আসে না। আমার এক রুমমেটের ডেঙ্গু হয়েছে। সেই ভয়ে এখনও মশারি কিনতে এলাম।
দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সুতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে ১০ থেকে ১৫ ধরনের মশারি পাওয়া যায়। এসব মশারি ২০০ থেকে শুরু করে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজার এলাকার সোনার বাংলা বেডিং স্টোরের মালিক আনিসুর রহমান বলেন, মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে, তবুও মশারি টানাবে না। সবাই যদি মশারি টানাত, আমরা বিক্রি করে কুলাতে পারতাম না। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দুটির বেশি মশারি বিক্রি করতে পারছি না।
আরও পড়ুন : শিশুরা কেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়?
আরেক বিক্রেতা মো. শামসুল বলেন, কারওয়ান বাজারে অনেক হকার আছেন, যারা রাতটা কোনো রকম মার্কেটে কাটিয়ে দেন। অনেক রিকশাচালকসহ অনেকে ফুটপাতে ঘুমান। তাদের মশারি ছাড়া উপায় নেই। তবে সবাই মশারি ব্যবহার করেন না। কিন্তু মশা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন একটি-দুটি করে বিক্রি হয়।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় হকার কালুর সঙ্গে। তিনি বলেন, মার্কেটের ফ্লোরে থাকি। মশার কামড়ে থাকা যায় না। হাতে টাকা হলে মশারি কিনব।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ জনে। গত একদিনে দেশে ২৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮২ জনে।
এনআই/আরএইচ