যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ইচ্ছামতো গুলি করে মারলেও বিচার হয় না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, র্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র্যাব সৃষ্টি তো আমেরিকারই পরামর্শ। আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়, অস্ত্রশস্ত্র দেয়। এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম সবই আমেরিকার দেওয়া। আমেরিকা যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন একটাই কথা যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। এতে আমাদের করার কি আছে।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে তার বিভিন্ন কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে র্যাব, পুলিশ কিংবা আর্মি হোক, কেউ যদি কোনো অপরাধ করে তার কিন্তু বিচার হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখেছি, পুলিশ ইচ্ছামতো গুলি করে মারলেও তাদের কিন্তু কোনো বিচার হয় না। একটা ছোট বাচ্চা পকেটে হাত দিলে তাকেও গুলি করে মেরে ফেলে দিল। আমেরিকার লোক সবাই যখন আন্দোলনে নামলো, তখন ওই একটাই বিচার মনে হয় সারা জীবনে করতে পেরেছে। আমাদের কতজন বাঙালি সেখানে মারা গেছে, সে কথা কিন্তু তারা বলে না। সে কথা আমি তাদের বলেছি।
তিনি বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’, আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটা সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের সিনেটরসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দেশের বদনাম করে তারা। যারা এমনটা করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে নিজেরা একেকটা অপকর্ম করে দেশ ছেড়েছে বা চাকরিচ্যুত।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়, আরও কয়েকটি দেশে এমন মানুষ রয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী যাদের ফাঁসি আমরা দিয়েছি, তাদের সন্তানরাও এসব দেশে রয়েছে। স্বাধীনতার পরে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, বাংলাদেশকে শোষণ করে অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে সেসব দেশে। তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে।
সরকারপ্রধান বলেন, নিষেধাজ্ঞা তারা কবে তুলবে জানি না। তবে, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা ক্ষতি যেটুকু করেছে, যাদের দিয়ে আমরা এদেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অর্থটা কি? সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমার এটাও প্রশ্ন, তাহলে কি সন্ত্রাস দমনে তারা নাখোশ?
তিনি বলেন, ৪০ বছর ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আবার সেই তালেবানদের হাতেই আফগানিস্তানের ক্ষমতা দিয়ে চলে আসলো আমেরিকান সৈন্যরা। নিজেদের ব্যর্থতার কথা তারা বলে না তো। এখন আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তো সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। কথায় কথায় একটা দেশের বিরুদ্ধে আরেকটা দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়, এটা কেমন কথা! আমি আমার বক্তৃতায় এটা স্পষ্ট করে বলে আসছি। এটা বলেছি, এই যুদ্ধ কিন্তু থামাতে হবে।
গুম-খুনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা গুম-খুন নিয়ে কথা তুলল। গুমের হিসেব যখন বের হতে শুরু করলো, তখন তো দেখা গেলো সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলেই শুরু। তারপর থেকে তো চলছেই। আমরা যখন তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। এর মধ্যে কি পাওয়া গেল আপনারা নিজেরাই তো ভালো জানেন। আমাদের দেশে এমনও আছে, আরেকজনকে শায়েস্তা করতে মা-কে লুকিয়ে রেখে গুম-খুনের কথা বলা হয়েছে। কেউ বোনকে লুকিয়ে রেখে গুম হয়েছে বলে। আর যে তালিকা আছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারত থেকে কিছু নাগরিক পলাতক আসামি। তাদের নামও সেই তালিকায়। আবার এমনও আছে, যে গুমের তালিকায় আছে কিন্তু সে হয়তো আমেরিকায় লুকিয়ে আছে। এরকম বহু গুমের ঘটনা ঘটে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে।
এএজে/এসএম