স্বরাষ্ট্রের কব্জায় এনআইডি, সংকটে পড়বে ইভিএম ও নাগরিক সেবা
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে সংযুক্ত করবে। এ নিয়ে বেশ কিছু প্রক্রিয়া এগিয়েছে। শুরু থেকেই সরকারি এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে নির্বাচন কমিশন।
তারা বলছে, এতে সংকটে পড়বে নাগরিক সেবা। সেই সঙ্গে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণেও কিছু সমস্যা সৃষ্টি হবে। এখন সংস্থাটির কর্মকর্তারা সবাই একজোট হয়ে এই স্থানান্তরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তারা বলছেন, যেকোনো মূল্যে এনআইডি অনুবিভাগকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা হোক।
গত ২১ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এনআইডির বিষয়ে একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। শুধু সিইসিকেই নয় অন্য চার কমিশনারকেও প্রথমবারের মতো এনআইডি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘পাঁয়তারা’র বিষয়ে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে তারা। এনআইডি ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে নেওয়া হলে নির্বাচন কমিশন ও সাধারণ জনগণ ১১টি সমস্যার সম্মুখীন হবে বলে জানায় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন : পাসপোর্ট সেবা প্রশ্নবিদ্ধ, চোখ কেন এনআইডিতে?
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকার চাইলে যেকোনো কিছুই নিতে পারে। সব প্রতিষ্ঠানের কাজই সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এনআইডি নিয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনসহ নাগরিকদের যেসব সমস্যা হবে সেগুলো আমরা সিইসিসহ অন্য চার কমিশনারকে জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এনআইডি চালু করা হয়েছিল। আমরা একই জিনিস ও একই লোকবল দিয়ে নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দিয়েছি। আমাদের কার্যক্রমগুলো এখন নিরলসভাবে চলছে। এটা অন্য কারও হাতে গেলে ম্যানুপুলেট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র চাইলে যেকোন কিছুই নিতে পারে। সেখানে আমাদের যুদ্ধের কোনো সুযোগ নেই। এটা আমাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং গত ১৩ থেকে ১৪ বছর ধরে আমরা এ প্রতিষ্ঠানকে লালন-পালন করেছি। এখন পর্যন্ত এনআইডি সেবায় আমাদের কোনো বদনাম নেই। আমরা এই সেবা আরও সহজ করতে নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেহেতু এটা আমাদের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে, সেহেতু আমরা চাচ্ছি এটা আমাদের কাছে থাকুক। আমরাই এটা ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারব।’
আরও পড়ুন >> মায়ের চেয়ে ছেলে ৩ বছরের বড়!
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে গেলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ এনআইডি তথা ভোটার তালিকা তাদের কাছে থাকলে তারা এটাকে বিভিন্নভাবে ম্যানুপুলেট করতে পারে। সবদিক থেকে এটা ভয়ানক হবে। আমাদের দেশে সবকিছুই ভেঙে পড়ছে এবং সবকিছুতেই কারসাজির শিকার হচ্ছে। তারা পাসপোর্টের মতো আলাদাভাবে করতে চাইলে করুক, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সার্ভারগুলো যেন তাদের আয়ত্তে না নেয়।’
তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে বাংলাদেশে বহুদিন থেকেই বিতর্ক চলছে। বিচারপতি আজিজের নেতৃত্বে গঠিত ইসির আমলে ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২০ লাখ ‘ভুয়া’ ভোটার থাকার অভিযোগ উঠেছিল, যার মূল কারণ ছিল একই ব্যক্তির একাধিক এলাকায় ভোটার হওয়া। বিষয়টি নিয়ে প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটে এবং শেষ অবধি এটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরে ড. শামসুল হুদা কমিশনের তত্ত্বাবধানে, দাতাদের সহায়তায় এবং সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ২০০৭ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়। ভোটার তালিকাটি ‘ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমস’ (আইইএফএস) নামক একটি বিখ্যাত আমেরিকান সংস্থা অডিট করে অভিমত দেয় যে এটি প্রায় নির্ভুল। যার ফলে আমরা সারা পৃথিবীতে প্রশংসা কুড়িয়েছি। ছবিযুক্ত এ ভোটার তালিকা আমাদের পুরো জাতির জন্য একটি গর্বের ধনে পরিণত হয়।’
বদিউল আলম বলেন, ‘সরকারকে অনুধাবন করতে হবে যে এনআইডির সঙ্গে ভোটার তালিকা এবং ভোট দেওয়া গভীরভাবে সম্পর্কিত। নির্দেশিত হস্তান্তর কার্যকর হলে ভোটার তালিকা সংরক্ষণ ও হালনাগাদের কোনোরূপ অবকাঠামো এবং জনবল নির্বাচন কমিশনে থাকবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই ভোটার ডাটাবেজের সংরক্ষণকারীতে পরিণত হবে, যা নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে বাধ্য।’
আরও পড়ুন >> এনআইডিতে কোটি কোটি ভুল : সিইসি
তিনি বলেন, ‘সরকার কেন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে? এর পেছনে কি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে? এ হস্তান্তরের মাধ্যমে ১১ কোটির বেশি নাগরিকের বিভিন্ন তথ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসবে, যা রাজনৈতিকভাবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে। মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব পেলে, সরকার তা ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নানা অজুহাতে এনআইডি থেকে বঞ্চিত করতে পারবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অজুহাতে অনেককে বর্তমান সরকারের আমলেই চাকরি থেকে বঞ্চিত, এমনকি নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে।’
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো যেহেতু এনআইডি ভোটার আইডি হিসেবে ইভিএমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তাই এটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
আরও পড়ুন >> ৬৯ পাসপোর্ট অফিস থেকে ওঠে কোটি কোটি টাকার মাসোহারা!
এ প্রসঙ্গে জানতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা এবং নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিতে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে যেসব সমস্যা হবে-
১. এনআইডি চলে গেলে ২০০৬ সালের মতো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে তৈরি অন্য সব ডাটাবেজের তুলনায় ভোটার তালিকা ডাটাবেজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে নিরঙ্কুশ আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। যার ব্যত্যয় বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারে।
২. ভোটার তালিকা ডাটাবেজ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেজের দ্বৈত ব্যবস্থাপনা থাকলে ইভিএম-এ ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের নিয়ন্ত্রাধীন জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভোটার শনাক্ত করলে নির্বাচন আইনসিদ্ধ/বিধিসম্মত হবে না। এছাড়া দ্বৈত ব্যবস্থাপনার কারণে ইভিএম-এ রক্ষিত ভোটার তথ্যও অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের এনআইডির তথ্যে গরমিল পরিলক্ষিত হলে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ভোটার শনাক্তকরণ, প্রার্থী ব্যবস্থাপনা, ভোটার ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিঘ্নিত হবে।
আরও পড়ুন: ‘এনআইডি সংশোধনে অযৌক্তিক দলিল চাওয়া যাবে না’
৩. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ভোটার ডাটাবেজের তথ্য-উপাত্তকেই ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভোটার তালিকা প্রণয়ন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উভয় প্রকার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় দ্বৈততা পরিহারসহ বিপুল অর্থ, শ্রম ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে।
৪. নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম নিরপেক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। ওই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনআইডি উইংয়ের আলাদা অবকাঠামো ও জনবল নেই। এক্ষেত্রে ওই কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থা কর্তৃক পরিচালনা করে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে সুদীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। একইভাবে অবকাঠামো তৈরি এবং পৃথক ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনার ফলে তথ্যের অভিন্নতা ক্ষুণ্ন হবে। আলাদা করে বিপুল অর্থ ও শ্রমের প্রয়োজন হবে, যা বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যয় সংকোচন নীতি পরিপন্থি।
আরও পড়ুন >> এনআইডি ডাউনলোড করে দেখেন তারা ‘তুরস্কের বাসিন্দা’
৫. ভোটার তালিকা ডাটাবেজের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ একাধিক হলে অপারেশনাল কার্যক্রমে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। এছাড়া, স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জনগণ যেসব ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য দিয়েছেন সেসব গোপনীয় তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর সংবিধান, আইন ও বিধি পরিপন্থি হবে।
৬. সংবিধান আইন ও বিধি দ্বারা ভোটার তালিকা প্রস্তুত, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ দ্বৈত ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলে কোনো ব্যক্তির এনআইডির তথ্যের যেকোন ধরনের সংশোধন/ সংযোজন/বিয়োজন সরাসরি ভোটার ডাটাবেজে প্রভাব ফেলবে, যার দায়ভার সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তাবে। যদিও সংবিধান ও আইনের দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে এ কাজের দায়ভার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের।
৭. অন্যদিকে, জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন হতে অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগে ন্যস্ত করা হলে শুধুমাত্র ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে, যা ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
৮. ভোটার তালিকার নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিধি অনুযায়ী প্রতি বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা ও বিপুল সংখ্যক মৃত মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করা হয়। মৃত মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করা না হলে এই ভোটার তালিকা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারাবে এবং এই ভোটার তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
আরও পড়ুন >> এনআইডি সংশোধনে দিয়েই তারা হয়ে গেলেন ভেনেজুয়েলার
৯. ভোটার তালিকা ডাটাবেজ প্রস্তুতকালে ভৌত ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি ও সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নেওয়া হয়েছে। সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এসব ভৌত ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সম্পদ। এক্ষেত্রে ডাটাবেজের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের বাইরে হস্তান্তর করা হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
১০. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে তিল তিল করে গড়ে তোলা একটি ডাটাবেজ আকস্মিকভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ন্যস্ত করা হলে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আদলে জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, সেন্ট লুসিয়া ও সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রানাডা দ্বীপপুঞ্জসহ অনেক দেশে নির্বাচন কমিশন পরিচয়পত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
১১. ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা আকস্মিক হুমকির মুখে পড়ে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল এনআইডি সেবার অনলাইন সার্ভিস চালু করা হয়। এতে জনসাধারণ ঘরে বসে জরুরি সেবা গ্রহণের সুযোগ পায়। পরে এনআইডির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার এনআইডি সেবাকে জরুরি সেবা ঘোষণা করে। তখন ভোটার তালিকা ডাটাবেজের সহায়তায় প্রস্তুতকৃত এনআইডির মাধ্যমে সরকার ২৫ লাখ পরিবারকে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে ২৫০০ টাকা করে অনুদান দিতে সক্ষম হয়। তাছাড়া করোনা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন নিবন্ধনে নির্বাচন কমিশন অসামান্য অবদান রাখে।
বর্তমানে ১৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে সেবা দিচ্ছে। এতে ভুয়া পেনশন গ্রহণকারী চিহ্নিত করে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিক, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। তাছাড়া এই ভোটার তালিকার ডাটাবেজের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হয়েছে, যার সুফল জনসাধারণসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভোগ করছে।
এসআর/এসএম