এবার চীন-জাপান ও পশ্চিমা দূতদের নিয়ে বসছে ঢাকা
বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর দূতদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে। এবার আসিয়ানের বাইরের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পশ্চিমা দূতদের সঙ্গে মিয়ানমার ইস্যুতে বসতে যাচ্ছে ঢাকা।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশের (আসিয়ান বাদে) রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে বারবার গোলা ও মর্টার শেল আসা, হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশের ধৈর্য ধরা এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকার বিষয়টি দূতদের ব্রিফ করবেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল আমরা মিয়ানমারের দূতকে তলব করেছিলাম। আজ (সোমবার) আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতদের ডেকেছি। আঞ্চলিকভাবে তাদের (আসিয়ান) গুরুত্বটা বেশি। তারা ওই ফোরামের সদস্য। এ কারণে তারা বিশেষ গুরুত্ব রাখে। আমরা তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিদেশি অন্য রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের এ বিষয়ে ব্রিফ করা হবে।
বিদেশি দূতদের কোন বিষয়গুলো ব্রিফ করা হবে— জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের মর্টারের গোলা এসে পড়ছে, এয়ার ফায়ারিং হচ্ছে, আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাদের বিষয়গুলো জানানো হবে। তা ছাড়া এসব ঘটনায় এখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়টি তাদের জানানো হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক বা স্থিতিশীল অবস্থানে যেন চলে আসে, সেজন্য তাদের সহযোগিতা চাওয়া হবে।
সোমবার আসিয়ানের দূতদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহের দূতদের ডেকে মিয়ানমার ইস্যুতে ব্রিফ করেছে সরকার। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করেন। সীমান্তে চলমান সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের সক্রিয় ভূমিকা বা সমর্থন চেয়েছে ঢাকা।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থতিতে আসিয়ানের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আসিয়ানের সদস্য হিসেবে মিয়ানমারের ওপর তাদের যে প্রভাব আছে, সেটা কাজে লাগাতে বলেছি। মিয়ানমারকে এ বিষয়ে বোঝানোর জন্য তাদের বলা হয়েছে। আমরা বলেছি, সীমান্তে গোলাগুলির মতো ঘটনায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু মুখোমুখি আমরা হচ্ছি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আমরা যে জানিয়েছি, সেটা তাদের বলেছি। তাদের (আসিয়ান) সমর্থন যেন আমাদের সঙ্গে থাকে, তা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত আসিয়ানের দূতদের ভাষ্য ছিল, সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত। সেসবের সঙ্গে বাংলাদেশ কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। দূতরা বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করেছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে বলে দূতদের জানিয়েছে ঢাকা। এক্ষেত্রে ঢাকা বলেছে, মিয়ানমারে যুদ্ধ হলে বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। প্রত্যাবাসনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আসিয়ান দূতদের ভাষ্য ছিল, মিয়ানমার নিয়ে আসিয়ানের যে পাঁচ দফা রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চায় জোট সদস্যরা। সেখানে মিয়ানমারকে তারা সহযোগিতা করতে চায়। তবে মিয়ানমার পাঁচ দফা পালনে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এ নিয়ে জোট সদস্যদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আসিয়ানের কয়েকজন দূত ঢাকাকে জানিয়েছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নেতারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন। সেখানে মিয়ানমার নিয়ে আসিয়ানের দেওয়া পাঁচ দফার অগ্রগতি নিয়েও কথা বলা হবে।
মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি যেহেতু একটু অস্থিতিশীল, আমরা এমন কিছু করতে চাই না, যা পরিস্থিতির আরও অবনতি করতে পারে। বরং সেখানে স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনাটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমরা যেকোনো সমস্যা সমাধানে শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। কারণ এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের ঘোষিত নীতি। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি, আমরা নজর রাখছি এবং যেকোনো পরিস্থিতি সাপেক্ষে যা উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সেটা করা হবে। সংশ্লিষ্টরা সজাগ আছেন।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে নতুন করে গোলাগুলি শুরু হয়। ওইদিন রাত ৮টার দিকে একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পড়ে। এতে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হন।
এ ঘটনায় রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। রাষ্ট্রদূতকে একটি প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে কয়েক দফায় মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল ও গোলা এসে পড়ে বাংলাদেশের ভেতরে। ওইসব ঘটনায়ও মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।
এনআই/আরএইচ