বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ড্যাপের পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন
বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে ড্যাপের পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বনানীর বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়তে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা শীর্ষক নগর সংলাপে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে পরিকল্পনা দলিল এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনসমূহের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা সঠিকভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন। এবারের ড্যাপে ভূমি ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রিত মিশ্র ব্যবহার, জনঘনত্ব পরিকল্পনা, পরিকল্পনা অনুমোদন, শিল্প দূষণ ব্যবস্থাপনা, টিওডি পরিকল্পনাসহ বিস্তৃত পরিসরে পরিকল্পনা অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। রাজউকের বিদ্যমান কাঠামোকে ঢেলে সাজানো ব্যতিরেকে এগুলোর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাজউকের ‘পরিকল্পনা’ ও ‘উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ’ শাখায় উপযুক্ত সংখ্যক পেশাজীবী নিয়োগ দেওয়া আশু দরকার। পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক রাজউক বোর্ড পুনর্গঠন করে পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করা দরকার।
তারা আরও বলেন, উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাজউকের নজরদারির দুর্বলতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও পেশিশক্তির কাছে নতজানু হওয়ার উদাহরণও আছে। ঢাকার মত অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি শহরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে রাজউককে তার পরিকল্পনাগুলো সঠিক বাস্তবায়নে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাসমূহের সাথে কার্যকর সমন্বয় ও আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারলে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণ ও কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে পারলে সরকারের জন্য ড্যাপ বাস্তবায়ন সহজতর হবে।
আলোচকরা বলেন, ঢাকা শহরের বিদ্যমান নগর বাস্তবতায় বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার প্রস্তাবনাসমূহ বাসযোগ্য শহর গড়তে সহায়ক হবে, যদিও এই প্রস্তাবনাসমূহের বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ব্লক ডেভেলপমেন্ট, কমিউনিটিভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সেবার বিকেন্দ্রীকরণ, মেট্রো স্টেশনভিত্তিক ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি), জনঘনত্ব পরিকল্পনা, ট্রান্সফার অব ডেভেলপমেন্ট রাইট (টিডিআর), ওয়ার্ডভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা এবং মানসম্পন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন শহরের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করবে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আঞ্চলিক পার্ক, জলকেন্দ্রিক পার্ক, ইকোপার্ক তৈরি, পথচারীবান্ধব অবকাঠামো তৈরি ও বাইসাইকেল লেনকে উৎসাহিত করা এবং অযান্ত্রিক পরিবহনকে সামগ্রিক পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করা— এসব বিষয় ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান, ড্যাপ পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, আইপিডি পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী আবু সাদেক পিইঞ্জ প্রমুখ।
এএসএস/ওএফ