ঢাবি ছাত্রী অপহরণ : ১৫শ ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার গ্রেপ্তার রুবেলের
রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা হলেন শাকিল আহম্মেদ রুবেল (২৮), আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও হাবিবুর রহমান।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, একটি ওয়ারলেস সেট, ২টি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি তিনি নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করতেন। রুবেলের মূল টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে তিনি গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করেন। সেই মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করেন।
রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, রুবেলের বাড়ি গাজীপুর। তার আরও ২টি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেয়নি। সে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ঘটনা ঘটাতেন।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল জানায়, তিনি এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের পর অন্তত ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। ছিনতাইয়ের পর মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন এ জন্য যে, তারা যেন পরে লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলে বা অভিযোগ না করে।
ছিনতাইয়ের জন্য নির্জনস্থান বেছে নিতো রুবেল বলে জানিয়ে ডিবি বলেন, মেয়েদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে রাজধানীর ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যেতেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ছিনতাইয়ের ৬টি মামলা রয়েছে। তাকে ও তার সহযোগীদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব।
ডিবি প্রধান বলেন, আমরা অনুরোধ করব কেউ পুলিশ পরিচয় দিলে যেন তার মোটরসাইকেল কেউ উঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে ও তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কোনো পুলিশ মোটরসাইকেল করে কখনো আসামি নিয়ে যায় না। তাহলে রুবেলের মতো মানুষকে আটকানো যাবে।
ঢাবির এক শিক্ষার্থী কীভাবে এতো সহজে রুবেলের খপ্পরে পরলেন জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আসলে তার হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়তো ওই শিক্ষার্থী তাকে পুলিশ ভেবে নেয়। তবে শিক্ষার্থী যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করতেন তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।
ছিনতাই কী রুবেলে পেশা নাকি নেশা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা রুবেলের পেশা ও নেশা দুটোই। তিনি পুলিশের ছদ্মবেশে এগুলো করতেন। এটা বুঝতে বুঝতে দেড় হাজারের মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রুবেল একাধিকবার জেলে গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলাও রয়েছে।
তার চার সহযোগীদের কাজ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা রুবেলকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এনে দিতেন আবার কেউ অন্যভাবে সহযোগিতা করতেন।
ওয়াকিটকি, পিস্তল ও ডিএমপির লোগো রুবেল কীভাবে পেল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
ভুয়া পুলিশের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে আটকানো যাচ্ছে না কেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব ঘটনায় অনেকে মামলা করতে থানায় যায় না। মামলা করলে এসব বিষয়ের শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মামলা না হলে তো আমরা এসব বিষয় জানতে পারি না।
তার পেছনে সত্যিকারের কোনো পুলিশ সদস্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রিমান্ডে এনে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব। তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত রয়েছে।
এমএসি/ওএফ