বিকাশ আপডেটের নামে প্রতারণা, ৩ মাসে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি
বিকাশ নম্বর আপডেটর কথা বলে একটি চক্র কৌশলে প্রতারণা মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের এই চক্রের মূল অভিযুক্তসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের মূলহোতা মাহবুব কাজী (২১) এবং তার তিন সহযোগী বিকাশের চাকরিচ্যুত সাবেক ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার (ডিএসও) শাহরিয়ার নাফিজ ওরফে মিল্টন (২৫), মো. রিপন মিয়া (২৪) ও মো. ইউছুফ মিয়া (১৮)।
সিআইডি জানায়, গতকাল (বুধবার) জামালপুর থেকে মিল্টন ও রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মো. ইউছুফ মিয়া ও ফরিদপুরের মালিগ্রাম এলাকা থেকে মাহবুব কাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন ও ৫৭টি বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডি আরও জানায়, বিকাশের সাবেক কর্মী মিল্টনের সহযোগিতায় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটির ডিএসওদের ফোন ক্লোন করত চক্রটি। পরে ক্লোনের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার বিকাশ এজেন্টদের ফোন দিয়ে নিজদের বিকাশ হেড অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিতো। পরে তাদের বিকাশ এজেন্ট নম্বরের আপডেটের কথা বলে ওটিপি নিয়ে প্রতারণা মাধ্যমে এজেন্ট একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিয়ে নিতো চক্রটি।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. রেজাউল মাসুদ।
রেজাউল মাসুদ বলেন, একজন বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে অভিযোগ আসে যে, তার দোকানের এলাকার ডিএসওর নম্বর থেকে তার কাছে ফোন করে বলেছে যে, বিকাশ হেড অফিস থেকে তাকে কল করা হবে সে যেন তাদের চাওয়া তথ্য দিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি তাকে ফোন দিয়ে বলেন, তিনি বিকাশের হেড অফিস থেকে বলছেন। ওই ব্যক্তি ভিকটিমের বিকাশ এজেন্ট একাউন্টটি আপডেটের কথা বলে কৌশলে ভিকটিমের কাছ থেকে ওটিপি কোড সংগ্রহ করে। ভিকটিমের বিকাশ এজেন্ট নম্বর থেকে ১ লাখ ৭০০ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
তিনি বলেন, সাইবার পুলিশ সেন্টারে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের মূলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মূলহোতা মাহবুব কাজী একজন পেশাদার বিকাশ প্রতারক। বিকাশে প্রতারণা করার উদ্দেশে তিনি একদিন শাহরিয়ার নাফিজ ওরফে মিল্টনকে ফোন করলে কথায় কথায় তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে মাহবুব কাজীর চাহিদা মোতাবেক মিল্টন তার ডিস্ট্রিবিউটর হাউজের আওতাধীন বিকাশ এজেন্ট নম্বরগুলো মাহবুব কাজীকে সরবরাহ করেন। বিনিময়ে তিনি মাহবুবের কাছ থেকে কমিশন পেতেন। এরপর মিল্টনের মাধ্যমে বিকাশের আরেক চাকরিচ্যুত ডিএসও মো. রিপন মিয়াও এই কাজে জড়িয়ে পরে।
মাহবুব কাজীর দেওয়া বক্তব্য ও তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি এ কাজে খুবই পারদর্শী। অভিযোগ করা ভিকটিম ছাড়া আরও অনেক বিকাশ এজেন্ট ও বিকাশ পার্সোনাল নম্বর থেকে এই প্রতারক চক্র গত ৩ মাসে আনুমানিক প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ কাজের জন্য তারা পেইড ভার্শন ক্লোনিং অ্যাপস ব্যবহার করে বিকাশের ডিএসওদের নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন এজেন্টদেরকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এমএসি/ওএফ