রোহিঙ্গাদের প্রতি তিন পরিবারের একটির সদস্যদের মানবপাচারের ঝুঁকি
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের মোট জনসংখ্যার ৫১ ভাগ শিশু। আর ৫২ ভাগ নারী ও কিশোরী। এদের প্রতি তিনটি পরিবারের মধ্যে একটির সদস্যদের সহজেই মানবপাচার, বাল্যবিবাহ, যৌন শোষণ ও নিপীড়ন ইত্যাদির শিকার হবার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন ঝুঁকির কথা জানায় সংস্থাটি।
সংস্থাটি জানায়, আসছে ২৫ আগস্ট পাঁচ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এক বিশাল বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক সীমানা পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের। এই প্রলম্বিত সংকট এখন পরিণত হয়েছে বিপুলাকৃতির এক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীতে। যার বর্তমান সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৩ জন (ইউএনএইচসিআর, জুন ২০২২)।
রেড ক্রিসেন্ট জানায়, এই মানবিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারকে শুরুতেই বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট তাদের নীতিমালা অনুযায়ী সরকারের সহায়ক হয়ে এই সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানায়। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের (আইএফআরসি) সহায়তায় এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কক্সবাজারে পপুলেশন মুভমেন্ট অপারেশন (পিএমও) নামে একটি আন্তর্জাতিক অপারেশন যাত্রা শুরু করে।
আরও পড়ুন: ‘ফুরিয়ে আসছে’ রোহিঙ্গা তহবিল, উদ্বেগে জাতিসংঘ
সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আজম বলেন, সংকটটি ইতোমধ্যেই একটি জটিল এবং দীর্ঘায়িত বাস্তুচ্যুতি সংকটে পরিণত হয়েছে। এজন্য শরণার্থী ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে চলমান কার্যক্রম সমন্বয় করে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আমরা এই সংকট নিরসনের জন্য প্রতিশ্রুতি ও সহায়তার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আইএফআরসির এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক পরিচালক আলেকজান্ডার ম্যাথিউ বলেন, ক্যাম্পে বাইরে থেকে যা দৃশ্যমান তা গত পাঁচ বছরের অনেক উদ্যোগের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থাকে তাদের এই অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু যা দৃশ্যমান নয়, অথচ ক্যাম্পে বসবাসরত মানুষের জীবনে ঘটে চলেছে, তা হচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, তাদের কোনো কাজ বা চলাফেরার স্বাধীনতা নেই, বরং কম হলেও অনিবার্যভাবে আছে বিষণ্ণতা, পাচার, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাসহ অন্যান্য সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি। যেহেতু কোনো স্থায়ী সমাধান এখনও নিশ্চিত নয়, মানবিক সহায়তা হিসেবে জীবনরক্ষাকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বিনোদন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপরও জোর দেওয়া দরকার।
আইএফআরসি বাংলাদেশ ডেলিগেশনের প্রধান সঞ্জিব কাফলে বলেন, এই সংকট আইএফআরসি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং দুরূহ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম। গত পাঁচ বছর ধরে ক্যাম্পে সুরক্ষাসহ যাবতীয় মানবিক সহায়তা প্রদানে আইএফআরসি ও তার সহযোগী ন্যাশনাল সোসাইটিগুলো বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টকে সহায়তা করে আসছে।
এনআই/এসএসএইচ