৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সচিবালয়ে হবে ১৬ তলা দুটি পার্কিং ভবন
সচিবালয়ে গাড়ি পার্কিং সমস্যা দীর্ঘদিনের। পার্কিং স্থানের তুলনায় গাড়ি বেশি হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় গাড়ির জট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এখানকার কর্মকর্তারা। এ সমস্যা সমাধানে দুটি বহুতল মেকানিক্যাল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সচিবালয়ে মাত্র ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমিতে ১১টি ছোট-বড় ভবন ও ছয়টি ক্যান্টিন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিভিন্ন সভায় অংশ নেওয়া সদস্য ও দর্শনার্থীসহ প্রায় ২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন সচিবালয়ে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার গাড়ি প্রবেশ করে এবং বেরিয়ে যায়।
সচিবালয়ে কাজকর্ম নির্বিঘ্ন করতে গত ২২ মার্চ বিভিন্ন নির্দেশনা সংবলিত চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের কাছে পাঠায় জননিরাপত্তা বিভাগ। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং একটি সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এখানে কাজকর্ম নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ছয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো হলো—
১. বাংলাদেশ সচিবালয়ের উপ-সচিব এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাইক্রোবাস মুক্তাঙ্গন বা নির্ধারিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পার্কিংয়ে অবস্থান করবে। কোনোভাবেই সচিবালয়ে অবস্থান করবে না।
২. প্রটেকশনের গাড়ি কোনোক্রমেই বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করবে না। সচিবালয়ের বাইরে পূর্ব পাশে/প্রাপ্তি সাপেক্ষে ওসমানী উদ্যানে প্রটেকশনের গাড়ি পার্কিং করতে হবে। স্টিকারবিহীন ও অনুমতি ছাড়া কোনো গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করবে না।
৩. বাংলাদেশ সচিবালয়ের সম্মুখভাগ অর্থাৎ আব্দুল গণি সড়কে কোনো রিকশা/ভ্যান চলাচল করবে না।
৪. সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য সব ধরনের ম্যানুয়াল কার্ড আগামী দুই মাসের মধ্যে বাতিল করা হবে।
৫. আগে ইস্যু করা গাড়ির প্রবেশ পাস আগামী ১০ জুন পর্যন্ত সচল থাকবে। গাড়ির নতুন প্রবেশ পাস দেওয়া হবে।
৬. সচিবালয়ের ভেতরে অকেজো ও ভাঙা গাড়িগুলো এক মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জননিরাপত্তা বিভাগের এসব নির্দেশনার পরও সচিবালয়ে প্রায়ই গাড়ির জট লেগে থাকে। গাড়ি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতেও দেখা যায়।
এ ছাড়া সচিবালয়ে পার্কিং না করতে পেরে অনেকে সচিবালয়ের সামনের ভিআইপি সড়কে গাড়ি রাখেন। ব্যস্ত এ সড়কে পার্কিং করার কারণে প্রায়ই লেগে যায় যানজট। এসব সমস্যার সমাধানেই কার পার্কিং ভবন দুটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩০ কোটি টাকা। সময় লাগবে তিন বছরেরও কম। দুটি ভবন হবে ১৬ তলা করে। এখানে মোট ৪৮০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (প ও বি,প) শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সচিবালয়ের ভেতরে এ দুটি কার পার্কিং ভবন নির্মাণ হবে। একটি হবে সচিবালয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অফিসের পাশে, আরেকটি হবে সচিবালয়ের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে সোনালী ব্যাংকের পাশে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ মুহম্মদ জুবাইর ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুটি ভবনই হবে ১৬ তলা করে। এখানে অন্যকিছু থাকবে না। পুরো ১৬ তলা জুড়ে শুধু পার্কিং থাকবে। এ রকম ভবন মৎস্য ভবনের ওখানে আছে। ওই আদলেই এ দুটি ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে মৎস্য ভবনের পার্কিং ভবন ছোট, আর এগুলো হবে তারচেয়ে বড়।
তিনি বলেন, দুটি ভবনের আয়তনই প্রায় সমান হবে। প্রত্যেকটি ভবনে ২৪০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। সে হিসাবে মোট ৪৮০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। বাস্তবায়ন করতে মোট ৩৩০ কোটি টাকা লাগবে।
মুহম্মদ জুবাইর বলেন, সাধারণত এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে তিন বছর সময় ধরা হয়। তবে প্রকল্প অনুমোদন করে অর্থায়ন করলে আশা করি তিন বছরের আগেই বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সুপারিশ করলে এটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। এরপর একনেকে উঠবে।
জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-১) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রস্তাবটি আমাদের কাছে এসেছে। এটি এখনো বিবেচনাধীন।
এসএইচআর/আরএইচ