এলএনজির ওপর অধিক নির্ভরশীলতা দেশকে সংকটে ফেলবে
দীর্ঘদিন এলএনজির ওপর অধিকতর নির্ভরশীলতা দেশকে আর্থিক সংকটে ফেলবে। এ সংকট সমাধানে দেশীয় গ্যাস মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
বুধবার (১৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সুজন আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেছেন, দেশের গ্যাস সম্পদ প্রায় শেষের পথে। নতুন করে গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা তেমন নেই। কিছু কিছু ব্যবসায়ী গ্যাস অনুসন্ধান ও আবিষ্কার না করে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ওপর জোর দিচ্ছেন। এটা মূলত তাদের নিজস্ব স্বার্থেই। কিন্তু আমরা মনে করি, সরকার নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাস আবিষ্কারের দিকে নজর দেবে; এটি ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।
>> কাতার থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য এলএনজি কিনতে চায় বাংলাদেশ
সুজন সম্পাদক বলেন, দেশে বর্তমানে জ্বালানি সংকট তীব্রতর হয়েছে। যথেষ্ট জ্বালানির অভাবে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বর্তমান সংকট দুই মাসের মধ্যে কেটে উঠবে বলে সরকার আশ্বস্ত করেছে। এই সংকট এবারের জন্য কাটিয়ে উঠলেও ভবিষ্যতে জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয় ও আশঙ্কা রয়ে যাবে।
গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ওপর মহল বা নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে অনেকেই বলেন, দেশে গ্যাস নেই। যেটুকু আছে তা উত্তোলনের জন্য যথেষ্ট নয়। বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করেই চলতে হবে। জনগণের সামনে এসব কথা বলার আগে আরেকটু দায়িত্বশীল হতে হবে।
>> বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলতে পারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত : ব্লুমবার্গ
বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বদরুল ইমাম বলেন, সরকারি নীতি নির্ধারণই পর্যায়ের অনেকেই বলেন, মিয়ানমার গত ১০ বছরে গ্যাস পায়নি। যা পাওয়ার অনেক আগে পেয়েছে। কিন্তু একথা অসত্য, মিয়ানমার গত দু-তিন বছর আগেও গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি বলে আমাদের সমুদ্রের অবস্থা আমরা জানি না। এটা ভুল কথা। আমাদের রিজার্ভ ও রিসোর্স নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। অনেকে বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস নেই। তারা জিয়োলোজিস্টের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মাটির নিচে গ্যাস নেই। তবে এটা বলা উচিত না। তার চেয়ে বরং বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত বিজ্ঞানভিত্তিক অ্যাসেসমেন্ট দেখে তাদের কথা বলা উচিত।
>> বছরের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য সহনীয় হতে পারে
গোলটেবিল বৈঠকে পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সম্পাদক মোল্লা আমজাদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারত। সরকারের উচিত প্রতি বছর বাজেটে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট করে অন্তত ১০টি কূপ খনন করা। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসবে। কিন্তু চাহিদা হবে তখন ৩ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তখন এলএনজি আমদানি নির্ভরতা আরও বাড়বে। তার আগেই আমাদের গ্যাস উত্তোলনে মনযোগী হতে হবে।
এ সময় বদরুল ইমাম বলেন, এলএনজির বর্তমান দাম নিয়েই তো আমাদের চাপে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে তো এ দাম আরও বাড়বে। তখন এলএনজি কেনাও সক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। প্রাকৃতিক গ্যাসেরও অনেক সংকট হতে পারে। তাই আমাদের নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় যেতে হবে।
>> জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি : পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ
তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আয়তন মাত্র ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। তারা কূপ খনন করেছে ১৭০টি। অথচ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের দেশে কূপ খননের সংখ্যা মাত্র ৯৮টি।
মিয়ানমার পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না- এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সাগরে আমাদের ২৬টি গ্যাসক্ষেত্র আছে। অথচ আমরা এখনো উত্তোলনে যেতে পারিনি। অন্যদিকে মিয়ানমার শিগগির সাগরে গ্যাস উত্তোলন শুরু করতে পারে। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে নিজেদের সম্পদ নিজেরাই উত্তোলন করব। কিন্তু আমরা জাতির পিতার নীতি থেকে সরে এসেছি।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি ও তরুণ বিজ্ঞানী আহমেদ ওমর সৈয়দ। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও সুজন নেতারা।
এএজে/ওএফ