এক ছবিতে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে, অন্যটিতে তারা লাশ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া যাওয়ার আগে ১৪ জন একটি গ্রুপ ছবি তুলেছিলেন। সেই ছবি পোস্টও করা হয়েছিল ফেসবুকে। ছবিতে দেখা যায়, কারও মুখে উপচে পড়ছে হাসির ঢেউ। সারি বেধে আগপিছ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। হাটহাজারীর একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলেন খৈয়াছড়ায়। কিন্তু তাদের হাসিমুখ যে এভাবে বিলীন হয়ে যাবে চিরদিনের মতো তা কেইবা জানত। মাইক্রোবাসে ঘুরতে গিয়ে তাদের ফিরতে হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে, সাদা কাপড়ে মুড়ে, নিথর দেহে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের যুগিরহাট এলাকার বাসিন্দা। আমানবাজারে আর এন জে কোচিং সেন্টারে পড়তেন এই ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে ছিলেন কোচিংয়ের শিক্ষকরাও। ছুটির দিনে দল বেঁধে সবাই গিয়েছিলেন মিরসরাইয়ের ওই বিখ্যাত ঝরনা দেখতে। সেই আনন্দযাত্রাই পরে রূপ নিল শেষ যাত্রায়।
ঘটনার পর থেকে এই দলের দুটি ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এর একটিতে হাস্যোজ্জল মুখে দাঁড়িয়ে সবাই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ছবিটি দেখিয়ে নিহত সজিবের ভাই তৌসিফ বলেন, শেখ মার্কেটে অবস্থিত প্রিয় কোচিংয়ের সামনেই ছবিটি তুলেছিলেন তারা। সেই ছবিটি পরে ফেসবুকে দিয়েছিলেন রাকিব বিন খান। আমার ভাই সজিব, রাকিবসহ ১৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: ফেলা হয়নি ক্রসিং বার, ছিলেন না গেটম্যান : আহত মাইক্রোযাত্রী
অন্য ছবিটি যেন সেটিরই সত্যতা জানান দিচ্ছে। এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, উদ্ধার করার পর মরদেহগুলো সাদা কাফনে মুড়িয়ে ঘটনাস্থলে সাজিয়ে রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফেসবুকে দুটি ছবি পাশাপাশি দিয়ে রতন দেবাশীষ নামের একজন লেখেন, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! ওরা বন্ধুরা মিলে আমানবাজার থেকে মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু আর ফেরা হলো না। ট্রেনের ধাক্কায় লাশ হয়ে গেল। যাওয়ার আগে ছবিও তুলেছিল, তারা কি জানত এই পরিণতি হবে? তাদের বাবা মা, স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই!
এদিকে দুর্ঘটনায় আহত ছয় জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন— মাইক্রোবাসের হেলপার তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাহিম (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯), এসএসসি পরীক্ষার্থী তছমির পাবেল (১৬) ও মো. সৈকত (১৮)।
অন্যদিকে নিহত ১১ জনের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন— কোচিং সেন্টারের চার শিক্ষক জিসান, সজীব, রাকিব ও রেদোয়ান এবং কেএস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী হিশাম, আয়াত, মারুফ, তাসফির ও হাসান।
কেএম/এসএসএইচ