উত্তরায় ৫ কাঠার প্লট ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা!
রাজধানীর উত্তরার মার্ভেলাস হাউজিং-এর পাঁচ কাঠা আয়তনের জমির দাম মাত্র দুই লাখ ৮২ হাজার টাকা। কোনো লটারিতে পাওয়া নয়, একেবারে রেজিস্ট্রিকৃত জমি। শুনতে অবাক লাগলেও ইউনিভার্সাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (ইউসিএল) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল কাইয়ুম জহির কাগজে-কলমে জমির এমন দামই দেখিয়েছেন।
অথচ রাজধানী উন্নয়ন কর্তপক্ষের (রাজউক) হাউজিং প্রকল্পের পাশেই অবস্থিত উত্তরার মার্ভেলাস হাউজিংয়ে পাঁচ কাঠা আয়তনের ১০ নম্বর রোডের এ-ব্লকের ৬১৪ নম্বর প্লটটির দাম কম করে হলেও কাঠা প্রতি ২৫-৫০ লাখ টাকা হওয়ার কথা। সে হিসাবে কোটি টাকার ওপরের প্লটের দাম দেখিয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
শুধু কি তাই, রামপুরা বনশ্রীর ২ নম্বর রোডের এ-ব্লকের ১৭ নম্বর বাড়িতে ১০৭৫ বর্গফুট ফ্ল্যাটের ক্রয়মূল্য দেখিয়েছেন ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া কুমিল্লার নিজ গ্রামে ক্রয় করা ১০০ শতাংশ নাল জমির ক্রয় খরচ দেখিয়েছেন ১১ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান অনুসারে এসব সম্পদের বেশিরভাগই তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন। দুদকে তারই দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই করে বড় ধরনের ঘাপলা পেয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক এসএম রাশেদুর রেজা। অনুসন্ধান শেষে তার সুপারিশেই কমিশন থেকে জহিরের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মামলা অনুমোদনের বিষয়টি দুদকের জনসংযোগ দপ্তর নিশ্চিত করেছে।
• আরও পড়ুন : সরকারি এক সংস্থাই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৪৬৮ কোটি টাকা
যদিও মামলায় মাত্র ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপনসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কাগজে-কলমে যা পেয়েছি তার ওপর ভিত্তি করেই মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমাদের ধারণা তদন্ত পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া যাবে। এছাড়া উত্তরার জমি ও বনশ্রীর ফ্ল্যাটের আসল পরিমাপ ও হিসাব করলে টাকার পরিমাণও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ইউসিএলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাতসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পায় দুদক। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিযুক্ত করে।
অনুসন্ধান কর্মকর্তার প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে দেখা গেছে, মো. জহিরুল কাইয়ুমের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার খামার পুস্করনী গ্রামে। তিনি ইউসিএলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দুর্নীতির অনুসন্ধান চলাকালে তিনি ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনার বিবরণী দুদকে দাখিল করেন। তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে কুমিল্লার নিজ গ্রামে ক্রয় করা (আটটি দলিলে) ১০০ শতাংশ নাল জমির ক্রয় ও রেজিস্ট্রেশন খরচসহ মোট খরচ দেখান ১১ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা।
এছাড়া রাজধানী উত্তরার মার্ভেলাস হাউজিংয়ে পাঁচ কাঠার আয়তনের ১০ নম্বর রোডের এ-ব্লকের ৬১৪ নম্বর প্লটটির ক্রয়মূল্য দুই লাখ ৮২ হাজার, রামপুরা বনশ্রীর ২ নম্বর রোডের এ-ব্লকের ১৭ নম্বর বাড়িতে ১০৭৫ বর্গফুট ফ্ল্যাটের ক্রয়মূল্য দেখান ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
আর সম্পদ বিবরণীতে তিনি অস্থাবর সম্পদ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংক, ইন্সুরেন্স, শেয়ার ও এফডিআরে থাকা ৪০ লাখ ৩৯ হাজার ২২৭ টাকা এবং বিশ তোলা স্বর্ণ, আসবাবপত্র ও প্রাইজবন্ডের তথ্য দেন।
• আরও পড়ুন : রেমিট্যান্স-মর্টগেজ ঋণ নাটকেও রেলওয়ে কমান্ড্যান্টের রক্ষা হয়নি
অনুসন্ধান সূত্রে আরও জানা যায়, জহিরুল কাইয়ুম দায়-দেনা হিসাবে ব্রাক ব্যাংক থেকে ঋণ ৬ কোটি ৪৭ লাখ ২৬৭ হাজার, ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ঋণের ১২ লাখ ৭১ হাজার ৭৮০ টাকা এবং ইউনিভার্সেল কো-অপারেটিভ সোসাইটি থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক এসএম রাশেদুর রেজা বলেন, মামলা দায়ের করা হলে জনসংযোগ বিভাগ থেকে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। সেখানেই যোগাযোগ করবেন প্লিজ।
আরএম/এনএফ