ঢাকায় জনসংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি : মেয়র তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ৫০ বছরে ঢাকা কোন অভিভাবকত্ব পায়নি। রাজধানীর উন্নয়নে সিটি করপোরেশন বিগত ৫০ বছরে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়নি যেগুলো নিয়েছে সেগুলো দৈনন্দিন কাজের পরিকল্পনা। আমরা আগামী ৩০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। ঢাকায় জনসংখ্যা কমিয়ে আনার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছি।
বুধবার (২০ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘রাজধানীর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক নগর সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র তাপস বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে ঢাকা বাসঅযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। আমরা উত্তরণে কাজ করছি। বর্তমানে আমরা বাসযোগ্যতায় ৩য় থেকে ৭ম স্তরে উপনীত হয়েছি। আমরা জরিপ করে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা করছি।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে আমরা খেলার মাঠ, বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ, সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র ও জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। ইতোমধ্যে ৫৬টি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র স্থাপন করেছি। বাসযোগ্য নগরী করতে জনসংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এটি উত্তরণ করতে পারলে আমরা ঢাকাকে বাঁচাতে পারব।
ঢাকার সৌন্দর্য নিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকা যে কত সুন্দর তা ঈদের সময় বুঝা যায়। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে তা উপভোগ করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে মুষলধারে বৃষ্টি হলে আধ ঘণ্টার মধ্যে আমরা পানি নিষ্কাশন করতে পারি। আগে যেসব এলাকায় পানি জমা থাকতো সেসব এলাকায় এখন আর পানি জমা থাকেনা। এখন আর ঢাকার ৭০ ভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়না। এ বর্ষায় আমরা কোন সংস্থাকে সড়ক খননের অনুমতি দেইনি। ফলে সড়ক খনন ১০ ভাগের নীচে নেমে এসেছে।
মেয়র তাপস বলেন, পথচারীদের জন্য ৫ ফুট প্রশস্তের ফুটপাত নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মাণ কালে সেফটি ট্যাঙ্ক ও সো ফয়েলের ব্যবস্থা করতে হবে নির্মাণকারীদের, না হলে রাজউক অনুমতি দিবে না। ঢাকাকে বিশ্রাম দিতে হবে। খুব শীঘ্রই আমরা রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দিব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, ঢাকাকে স্যাটেলাইট শহর করতে হবে। যারা বাইরে থেকে কাজ করতে আসবে কাজ শেষে তারা বাড়ি ফিরে যাবে থাকার সুযোগ পাবে না। গ্রামের মানুষকে গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে ঢাকার জনসংখ্যা কমে আসবে। ঢাকার ওপর চাপ পড়বে না ফলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
তিনি বলেন, পুরাণ ঢাকার যেসব স্থাপনা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে সেগুলো ভেঙে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে দেব বিদেশি সংস্থার সহায়তায়। এছাড়া গরিব মানুষের জন্য সাড়ে ৩ হাজার মাসিক কিস্তিতে ২ কক্ষের বাড়ি করে দেওয়া হবে। কোন ধরনের অগ্রিম টাকা দিতে হবে না। দাতা সংস্থা নিশ্চিত হলে খুব দ্রুত আমরা কাজ শুরু করব। ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো আমরা পুনঃসংস্কারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। তিনি রাজধানীর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়নের করনীয় তুলে ধরেন।
নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি কে চ্যাং লিয়াং।
এছাড়া আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন (শীপলু), স্থপতি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ফারহানা শারমিন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, এলআইইউপিসি ইউএনডিপির প্রকল্প পরিচালক ইয়োগেশ প্রদানাং প্রমুখ।
আইবি/আইএসএইচ