এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চার ঘণ্টার ভোগান্তি
‘বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকি। কারণ আমাদের জন্য বৃষ্টি মানে জলাবদ্ধতা, ময়লা পানি আর ভোগান্তি। এক ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হলে চার ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তির বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডির জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) গলির আবাসিক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম।
শুধু একজন রফিকুল ইসলামের নয়, এই এলাকায় বসবাসরত হাজারো মানুষের একই অভিযোগ। বৃষ্টি হলেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে বৃষ্টির পর সরেজমিনে নায়েম সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা কলেজের আবাসিক হল এলাকায় প্রবেশের সামনের গেট থেকে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি এবং পেছনের আবাসিক এলাকার একমাত্র সড়ক পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে আছে। সড়কের পানি ড্রেনে নিষ্কাশনের বদলে উল্টো ড্রেন থেকে সুয়ারেজের ময়লা পানি যুক্ত হচ্ছে সড়কে। কেউ রিকশা নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন, আবার কেউ জুতা হাতে নিয়ে ময়লা পানি মাড়িয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন। মোটরসাইকেল অথবা গাড়ি নিয়ে যারা বের হচ্ছেন তারাও পড়ছেন বিপাকে। পানি ও ময়লা ইঞ্জিনে প্রবেশ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গাড়ি।
আরও পড়ুন : টিকিট বিক্রিতে দুর্নীতি, সহজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
সাব্বির আহমেদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টি হলেই শুরু হয় ভোগান্তি। আশেপাশে এতগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান, তবুও পানি নিষ্কাশনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কেউ নেই। বাইক নিয়ে সড়কে বেরিয়েছি। ময়লা আবর্জনার এই পানিতে বারবার স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর এত পচা পানি, শরীরে লাগলেই চুলকানি শুরু হয়ে যায়।
বাসায় ফিরতে ময়লা পানির সামনে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তেজগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আজমাইন হোসেন। তিনি বলেন, এখান থেকে আমার বাসা দেখতে পাচ্ছি। তবুও এই ময়লা পানি দিয়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। শুধু বৃষ্টির পানি হলে কথা ছিল, এখানে ড্রেন থেকে ময়লা পানি যুক্ত হচ্ছে। এখন বাধ্য হয়ে দুই মিনিটের সড়ক পার হতে রিকশা নিতে হচ্ছে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি নিয়ে কাজ করুক। এভাবে আর পারা যায় না।
আরও পড়ুন : ‘জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় মন্ত্রী-কর্তাদের জনগণের কাতারে আসতে হবে’
সারা দেশ থেকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কোর্স করতে আসেন তারাও পড়েন মহা-ভোগান্তিতে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মূল সড়ক পেরিয়ে নায়েমের ভেতরের সড়কও ডুবে যায়। ফলে ভেতরে প্রবেশ করা কিংবা বাইরে বের হওয়ার সময় সমস্যায় পড়েন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নায়েমের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক বছর ধরেই এমন সমস্যা দেখছি। পানি নিষ্কাশনের কোনো জায়গা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় মূল সড়ক। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা আসলেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘদিনেও কোনো পদক্ষেপ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সিটি কর্পোরেশন কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করব যেন এই কষ্ট লাঘবে তারা পদক্ষেপ নেন।
নায়েমের গলি এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের আওতাধীন। সমস্যার সমাধানে কেন দীর্ঘদিনেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না তা জানতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ স ম ফেরদৌস আলমের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে প্রথমবার ফোন রিসিভ করে কেটে দেন। পরবর্তীতে আবার ফোন করলে রিসিভ করেননি তিনি।
আরএইচটি/এসকেডি/জেএস