গরুর গলায় মালা দিচ্ছেন তারা
মাত্র বিক্রি হওয়া গরুটির দাম পড়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার, গরুর ক্রেতা মালিবাগের আব্দুস সাত্তার। গরু কেনার পর ৩ নম্বর কাউন্টারে হাসিল করানোর অপেক্ষায়, তখন আব্দুস সাত্তারের ছেলে তাহসিন আহমেদ বায়না ধরেছে 'বাবা গরুর মালা পরাতে হবে'। পাশেই দাঁড়ানো গরুর মালা বিক্রেতা মামুন তখন হাজির। ৩০ টাকা দামের গরুর মালা আর ৫০ টাকা দামের দৃষ্টিনন্দন বেল্ট পরিয়ে দেওয়া হলো গরুর গলায়।
হাট থেকে বের হওয়ার পথে অনেক মালা বিক্রেতা কোরবানির পশুকে সাজিয়ে দেওয়ার মৌসুমি ব্যবসায় নেমেছেন। কাগজের রঙিন মালা, কাপড়ের মালা, শিংয়ের বেল্ট, গলার ঘণ্টা, রং-বেরংয়ের গরুর দড়ি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান, আর ফেরি করে হাটে ঘুরছেন একদল লোক। তারা মূলত গরু সাজিয়ে দেওয়ার মৌসুমি ব্যবসায়ী।
আফতাবনগর হাটে এমনই একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী মামুনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি মূলত একটি কারখানায় কাজ করি। ঈদের ছুটিতে হাটে এসে এই ব্যবসা করছি। পাইকারি দামে এসব কিনে এনে হাট ঘুরে ঘুরে এগুলো বিক্রি করছি। আমার মতো অনেকেই এই সিজিনাল ব্যবসা করছেন এই হাটে।
তিনি বলেন, সবাই লাখ লাখ টাকার গরু কিনে যখন হাট থেকে ফিরে তখনই আমরা গিয়ে বলি, গরুকে সাজিয়ে দেই। অনেকে রাজি হয়ে ২০০/৩০০ টাকার মধ্যে গরুর মালাসহ নানা উপকরণ দিয়ে গরু সাজিয়ে নেয়। আবার অনেকে নেয় না।
এমন আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান এসব পণ্যের দামের ধারণা দিয়ে বলেন, গরুর মালা আছে বিভিন্ন ধরনের যা ৩০ থেকে ৮০ টাকা। তবে কাগজের মালার দাম আরেকটু কম। ঝিরঝিরি মালা ৪০ টাকা পিস। এছাড়া গরুর গলায়, দুই সিংয়ে পরানোর বেল্ট ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে, ছোট ছোট ঘণ্টা ১০০/১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। গতকাল হাটে সবচেয়ে বেশি গরু বিক্রি হয়েছে, আমরাও এসব গরু সাজানোর পণ্য গতকাল অনেক বিক্রি করেছি। আজ সকাল থেকে বিক্রি একটু কম, তবে দুপুরের পর হয়তো বা বাড়বে।
বনশ্রী এলাকা থেকে গরু কিনতে হাটে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন চিকিৎসক। এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি গরু কেনার পর, গরু সাজানো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ঘিরে ধরেছেন তাকে। উপায়ন্তর না দেখে তিনি গরুর মালা আর গলার বেল্টে সাজিয়ে নিচ্ছেন গরুটি। এসময়ই কথা হয় এই চিকিৎসকের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাসায় ছোট ছেলে মেয়ে আছে, তারা খুব জেদ ধরেছিল গরু কিনতে হাটে আসতে। কিন্তু তাদের হাটে আনিনি। গরু কিনে এমনভাবে সাজিয়ে নিয়ে গেলে তারা খুশি হবে। হাটে গরু কিনে মালা বেল্ট দিয়ে সাজিয়ে নেওয়া একটা ঐতিহ্য, ছোট বেলা যখন বাবা চাচার সঙ্গে হাটে আসতাম তখনও আমরা এভাবে সাজিয়ে নিতাম।
এএসএস/জেডএস