বড় গরুর ক্রেতা কম, চিন্তিত বিক্রেতারা
রাজধানীর প্রতিটি হাটেই এবার শুরু থেকেই পর্যাপ্ত কোরবানির পশু রয়েছে। প্রথম দিকে গরুর পাইকাররা ক্রেতা না পেলেও শুক্রবার (৮ জুলাই) থেকে হাটগুলো জমে উঠেছে। তবে হাটগুলোতে বড় গরুর তুলনায় ছোট আর মাঝারি গরুই বেশি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা না থাকায় বড় গরুর বেশিরভাগ এখনও অবিক্রিত রয়ে গেছে। যে কারণে বড় গরু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গরু বিক্রেতারা।
রাজধানীর বড় হাটগুলোর মধ্যে একটি আফতাবনগর হাট। হাটটিতে বেশ কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা বড় গরু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। তবে হাটে পর্যাপ্ত ছোট, মাঝারি গরুর আমদানি আছ। এই কয়দিন বিক্রেতা ক্রেতা খুঁজে না পেলেও গতকাল সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচুর ক্রেতা সমাগম ছিল হাটে। আজও সকাল থেকে ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন। হাটে যেমন মাঝারি আকারের পর্যাপ্ত গরুর উপস্থিতি আছে, তেমনি এসব গরু বিক্রিও বেশি হচ্ছে।
কুষ্টিয়া থেকে মোট ১৩টি গরু নিয়ে রাজধানীর আফতাবনগর হাটে এসেছেন রুবেল মিয়া নামের এক পাইকার। তিনি বলেন, আমার ১৩টি গরুর মধ্যে ৫টি তুলনামূলক বড়। বাকি আটটি গরু ছোট, আর মাঝারি মিলিয়ে। সেই আটটি গরুর মধ্যে ৫টি বিক্রি হয়ে গেছে। আর ৩টি ঈদের আগের রাতের মধ্যেই হয়ত বিক্রি হয়ে যাবে, কারণ এসব গরুর চাহিদা আছে। কিন্তু বেশি লাভের আশায় বড় ৫টি গরু এনেছি, এগুলো একটাও বিক্রি হয়নি এখনও। আমার কাছে বড়গুলোর মধ্যে ৪ লাখ টাকা থেকে শুরু, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার গরু আছে। কিন্তু একটাও এখনও বিক্রি হয়নি। বড় গরু নিয়েই এখন চিন্তার বিষয়।
পাবনা থেকে ৪ জন মিলে ২০টি গরু আফতাব নগর হাটে এনেছেন পাইকাররা। এদের মধ্যে একজন রমজান আলী। তিনি বলেন, ক্রেতারা আগে এসে মাঝারি গরু দেখে, দরদাম করে, কিনে। কিন্তু বড় গরুর ক্রেতা খুব কম। শুধু দাম শুনে চলে যায়। একটার দামও বলে না। এক থেকে দুই, আড়াই লাখ টাকার গরুর সবচেয়ে বেশি চাহিদা আছে, আর বিক্রিও হচ্ছে। বড় গরু যেসব সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি দাম, এমন গরু বলতে গেলে বিক্রিই হচ্ছে না। আমাদের ২০টি গরুর মধ্যে ছোট, মাঝারি মিলিয়ে ৯টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এই সাইজের গরু বিক্রি বাকি আছে ৭টি। যা আজকে রাতের মধ্যে হয়ত বিক্রি হয়ে যাবে। কিন্তু বড় সাইজের ৪টি গরু এখনও বিক্রি হয়নি, বিক্রির ভাবও নেই। যদি বিক্রি না হয়ে ফেরত নিয়ে যেতে হলে বিশাল লস হয়ে যাবে।
মেহেরপুর থেকে গরু নিয়ে আফতাবনগর হাটে এসেছেন মকিদুর রহমান। তিনি বলেন, বেশিরভাগ পাইকার যারা হাটে বড় গরু এনেছেন তারা গরুগুলো বিক্রি করতে পারেনি এখনও। অথচ তাদের মধ্যেই যারা ছোট, মাঝারি গরু এনেছেন তাদের গরু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আজ সারাদিন এবং রোববার ভোর রাত পর্যন্ত গরু কেনাবেচা হবে। এই সময়ের মধ্যে বড় গরু বিক্রি না হলে সেগুলোর দাম কম যেতে পারে, সেক্ষেত্রে পাইকাররা লস খেয়ে যাবে।
রাজধানীর গোড়ান এলাকা থেকে আফতাবনগর হাটে আসা আকরাম হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, গতকালও হাটে এসেছি, দরদাম জেনেছি। তবে আজ গরু কিনতেই হবে। বাজার ঘুরে যেটা বুঝেছি সেটা হচ্ছে এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। বিক্রেতারা দাবি করছেন, গরুর খাবারের দাম বেশি হওয়ার কারণে দাম এবার বেশি যাচ্ছে। গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত বাজার ঘুরে দেখলাম মাঝারি গরুই বেশি কিনছেন ক্রেতারা। কালও যেই বড় গরু হাটে দেখেছি আজও সেগুলোও দেখা যাচ্ছে।
মালিবাগ এলাকা থেকে আফতাবনগর হাটে আসা আরেক ক্রেতা আফতাব উদ্দিন রঞ্জু বলেন, ছোট মাঝারি গরুর দামও এবার বেশি যাচ্ছে। গতবার যেই গরু এক লাখ টাকায় কেনা গেছে সেই গরু এবার দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করছেন পাইকাররা। গত দুই তিন দিন ধরে বাজার ঘুরে মনে হয়েছে এ বছর গরুর দাম বেশি। মানুষ সবচেয়ে বেশি কিনছে মাঝারি সাইজের অর্থাৎ দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে। তবে এর চেয়ে বড় গরুগুলো কম বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।
এএসএস/জেডএস