পদ্মা সেতু কোরবানি আয়োজনে অভাবনীয় সুযোগ তৈরি করেছে
পদ্মা সেতু কোরবানির আয়োজনে অভাবনীয় সুযোগ তৈরি করেছে এবং কোরবানিকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শুক্রবার (১ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা: দেশীয় পশুতে কোরবানি, খামারিদের সমস্যা ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ কথা জানান।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, আত্মবিশ্বাস, সততা, দৃঢ়তা ও দেশপ্রেমের অকল্পনীয় সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। এ সেতু আমাদের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কোরবানির পশু নিয়ে একসময় ঘাটে এসে দুই-তিন দিনও অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু দিয়ে যারা ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গায় কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তাদের জন্য পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে যেমন কোরবানির জন্য সম্প্রসারিত জায়গা হচ্ছে, অপরদিকে রাস্তা-ঘাটে ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হচ্ছে না। দেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে অন্যত্র পশু পারাপারে এখন ফেরি পার না হলেও চলে। ফলে ফেরিঘাটকেন্দ্রিক খামারিদের বিড়ম্বনা এখন নেই। পদ্মা সেতুর কারণে কোরবানির পশু পারাপার সহজ হয়েছে। পথে অনেক সময় পশু ক্লান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে যেত, অনেক সময় মারাও যেত, সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণ হয়েছে। এটা খামারি, বিপণনকারী ও ভোক্তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এভাবে পদ্মা সেতু কোরবানির আয়োজনে অকল্পনীয় সুযোগ করে দিয়েছে। কোরবানির অর্থনীতিতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর আমরা নিয়ম করে দিয়েছি যিনি কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তিনি পশু ঢাকায় না সিলেটে কোথায় বিক্রি করবেন সেটা তার ব্যাপার। পথে কোনো বাজারে তাকে পশু নামাতে জোর করা যাবে না। খামারিদের আরেকটি সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, বাড়িতে বা রাস্তায় পশু বিক্রি করলে তাদের কোনো হাসিল দিতে হবে না। কেউ খামারিদের বাজারে এনে পশু বিক্রিতে বাধ্য করতে পারবে না। কোরবানির পশু বাড়িতে বিক্রি করলে নিকটবর্তী বাজার ইজারাদার চাঁদা আদায়ের কথা বলতে পারবে না। রাস্তাঘাট অথবা যেখানে যান চলাচলে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হয় সেখানে কোনো পশুর হাট বসতে পারবে না। নির্ধারিত জায়গায় হাট বসবে। প্রতিটি স্বীকৃত হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল ব্যবস্থাপনা থাকবে, যাতে অস্বাস্থ্যকর ও রোগগ্রস্ত পশু কেউ সামনে নিয়ে না আসে অথবা সেটা বিক্রি না হয়। হাটে বিনামূল্যে পশু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
ক্রান্তিকালে খামারিরা যাতে টিকে থাকতে পারে সেজন্য রাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এবার বৃহত্তর সিলেট ও ঢাকার একটি অংশে প্রাণিসম্পদ খাতে যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রণোদনা দিয়ে খামারিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন এবং এ খাত যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি এম এ জলিল মুন্না রায়হানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন— প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউল আহাদ, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন প্রমুখ।
এএসএস/এসএসএইচ