প্রকল্প চলাকালে পিডিসহ সংশ্লিষ্টদের কর্মস্থলে পাওয়া যায় না
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প চলাকালীন সময়ে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কর্মস্থলে পাওয়া যায় না। উপজেলা, জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে গেলে অনেক সময়েই ‘কি পারসনদের’ পাওয়া যায় না। এর কারণ খুঁজে বের করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।
বুধবার (২৯ জুন) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশে পাবলিক অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন : অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমুদা খাতুন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিকল্প নেই। প্রকল্প পঞ্চগড়, প্রজেক্ট পরিচালক ঢাকায় থাকেন। এটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? বরাদ্দ বা কাজের জন্য ঢাকায় হয়ত আসতে হবে, কিন্তু সার্বক্ষণিক ঢাকায় থাকা দরকার নেই। এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কাজের জায়গায় থাকতে চায় না।
তিনি বলেন, শুধু প্রজেক্ট পিডি নয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদেরও কাজের স্থলে পাওয়া যায় না। উপজেলা, জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক ‘কি পারসনকে’ আমরা পাই না। এর কারণ খুঁজে বের করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠিন আদেশ দিয়েছেন, কিন্তু তারপরও আমরা অর্জন করতে পারছি না। আমরা বিষয়টি আলাপ করি, কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। আর একটি বিষয় বলি যার অধীন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে, সে আবার ঢাকায় বসে আছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক আইন ও বিধি রয়েছে যার কোনো প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রসঙ্গিক। কোনো কোনোটা অন্যায়। ব্রিটিশ, পাকিস্তান কিংবা মিলিটারি শাসন ব্যবস্থায় তাদের প্রয়োজনে আইন করেছিল, কিন্তু আমরা এগুলো বয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা এগুলো পরিবর্তন করছি। কিন্তু সময় সাপেক্ষ বিষয়। এগুলো পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত অনেককে ধরতে পারছি না। এখন সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ওই আইন আগের জায়গায় রয়েছে।
মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কী চান, সেটাও বুঝতে হবে। তার প্রধান এজেন্ডাই হচ্ছে বাংলাদেশ। যাদের দাতা বলছি, তারা দাতা নয়। দাতারা ঋণ দেয়, তা বলছি সহায়তা। এখন আর দাতা কেউ নেই। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, আমরা আর বলতে পারছি না। আর সড়ক প্রকল্প নেওয়া হবে না। আমাদের বিদ্যমান সড়কগুলোর সংস্কার করব। মানুষ পারাপারের জন্য ওভারপাস কিংবা আন্ডারপাস করা হবে। আইএমইডিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১০টি পিলার বা ভিতকে কেন্দ্র করে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যার মধ্যে রয়েছে অভিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা, এখানে কী কী ঝুঁকি রয়েছে, অবকাঠামোটি বাস্তবায়নের ফল, যথাযথ ডিজাইন, পরামর্শ প্রক্রিয়া, প্রকল্প বাস্তব জীবনে কতটুকু লাভজনক ইত্যাদি। আর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হওয়ার পর যেন ঠিকাদার দায়বদ্ধ থাকে এমন বিষয়টি প্রজেক্টে থাকা উচিত। প্রজেক্ট পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কি না এ বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি বলেন, যেকোনো প্রজেক্ট বাস্তবায়নের বড় একটি সমস্যা হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ। প্রজেক্টের সার্বিক তদারকির বিষয়টি লক্ষ্য রেখে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করতে হবে। সক্ষমতা অর্জনে তাদের মানবসম্পদ বাড়ানো জরুরি। ঢাকার বাইরে এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যেতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ের অফিসের মাধ্যমে আইএমইডিকে বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আইএমইডি স্থাপন করার কথা বিবেচনাও করা যেতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুস শহীদ খান বলেন, পার্লামেন্টারি স্থায়ী কমিটিকে শক্তিশালী করতে একজন সংসদ সদস্যকে প্রধান করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পের দুর্নীতি বা অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ করে থাকি। যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে, সেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হয়। আমাদের সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়ে থাকে।
সেমিনারে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের লাইফ স্টাইলের পরিবর্তন হচ্ছে। সে কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়নের আগে সুপরিকল্পনা থাকা জরুরি। গ্রামের অনেক রাস্তা রয়েছে, সেখানে মানুষ হয়ত ভবিষ্যতে থাকবে না। আমাদেরকে জনগণকে মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
আরএম/জেডএস