বন্যা থেকে বাঁচতে প্রাকৃতিক জলাশয়কে রক্ষা করতে হবে
বন্যা থেকে দীর্ঘ মেয়াদে বাঁচতে হলে হাওর-বাঁওড়সহ সব প্রাকৃতিক জলাশয়-জলাভূমিকে রক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
সোমবার (২০ জুন) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, এবারের বন্যায় বাংলাদেশসহ ভারতের আসাম, মেঘালয়, চেরাপুঞ্জির অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের বড় দায় রয়েছে, এটা অনস্বীকার্য। প্রবল বৃষ্টিপাতে ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলে প্রায়ই বন্যা দেখা দেয়। তবে এবারের বন্যার অস্বাভাবিক ব্যাপকতা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এ বন্যার জন্য প্রাকৃতিক হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী এলাকার বিভিন্ন জলাশয়-জলাভূমির পানি ধারণ ক্ষমতা ক্ষমতা হ্রাস ও স্বাভাবিক পানি প্রবাহের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের দায়কে অস্বীকার করা যাবে না।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলনে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশেই দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশংকা করা হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী বছরগুলোতেও নিয়মিতভাবে দেখা দিতে পারে । আমাদের দেশ মৌসুমি বায়ুর অঞ্চল হওয়াতে বন্যার সাথে বসবাস করবার জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবার কথা ছিল, সেই মূলনীতি থেকে সরে গিয়ে আমরা প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ ও জলধারণ এলাকা নষ্ট করে চলেছি প্রতিনিয়ত।
তিনি বলেন, নগর এলাকাতে প্রাকৃতিক খাল, জলাধার ক্রমশ ধ্বংস করা এবং যথাযথ আইনের শাসনের অভাবে সারাদেশেই নদী দখল, জলাশয়-জলাভূমি ভরাট চলছে নির্বিচারভাবে। একইসঙ্গে আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা সংকটের কারণে নদীগুলোর পানিধারণ ক্ষমতাও কমেছে মারাত্মকভাবে। নদীগুলোতে ড্রেজিং প্রকল্পে সরকারি ব্যয়কৃত অর্থ প্রকৃত অর্থে নদীগুলোর নাব্যতা বাড়াতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে তার কোন বিশ্লেষণ ও তদারকি নেই। কেবলমাত্র যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ এবং নির্বিচার নদীশাসন ও কৃত্রিম ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের বন্যা-জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমাদেরকে বাঁচতে হলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের হাওর-বাঁওড়, নদী-খাল, জলাশয়-জলাভূমি প্রভৃতি প্রাকৃতিক জলধারণ এলাকা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে, টেকসই উন্নয়নে এর কোন বিকল্প নেই। আমাদের উচ্চ আদালত ঘোষিত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জীবন্ত সত্তাসমূহের দখল-ভরাটের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে যথাযথ প্রতিবিধান করে এগুলো পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাশাপাশি আমাদের ভূমি শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী পরিবেশ-প্রতিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে যে কোন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প ও উদ্যোগ নেওয়ার আগে পরিবেশগত সমীক্ষা ও পরিকল্পনাগত প্রভাব বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তৈরি করা প্রয়োজন। এর অন্যথা হলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের বন্যা দুর্যোগের ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে, যা মোকাবিলা করা আমাদের রাষ্ট্র-সরকার ও সাধারণ জনগণের জন্য কোনভাবেই সম্ভব হবে না।
এএসএস/আইএসএইচ