সিলেটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা, কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিম
টানা বর্ষণ ও অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বেড়েই চলেছে বন্যার পানি। ইতোমধ্যে সিলেট নগরীসহ অনেক উপজেলা পানিতে পুরোপুরি প্লাবিত। পানি বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোও তলিয়ে গেছে। সংকটাপন্ন এই সময়ে ব্যাহত হচ্ছে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়াও পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে একটি সেন্ট্রাল মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডকে সিলেটে পাঠানো হয়েছে। তারা সরেজমিনে বন্যার সার্বিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।
শনিবার (১৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের একটি তিন সদস্যদের মেডিকেল টিম ইতোমধ্যে সিলেট চলে গেছে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ক্লিনিক শাখার পরিচালক, কমিউনিকেবল ডিজিজ (সিডিসি) শাখার পরিচালক এবং উপজেলা হেলথ কেয়ারের পরিচালক রয়েছেন। স্থানীয়ভাবেও অধিদপ্তরের আরও একটি দল কাজ করছে। এছাড়াও ঢাকায় আমরা একটি সেন্ট্রাল মনিটরিং টিম করেছি, ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল রুম করেছি। ঢাকা থেকে যাওয়া আমাদের মেডিকেল টিম সরেজমিনে ওই সব এলাকা পরিদর্শন করে পরবর্তীতে করণীয় নিয়ে আমাদেরকে পরামর্শ দেবে।
আহমেদুল কবির বলেন, এই মুহূর্তে মেডিকেল টিমের চেয়ে বেশি জরুরি হলো রেস্কিউ (উদ্ধার) টিমের কাজ। পানি থেকে তো আগে মানুষকে উদ্ধার করতে হবে, তারপর তো চিকিৎসা। আপাতত কাজ হলো মানুষকে উদ্ধার করা এবং শুকনা খাবার দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা। সেই সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো চালু রাখা, যেন স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ক্রাইসিস তৈরি না হয়।
অধিকাংশ হাসপাতালই পানির নিচে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই এখন পানির নিচে। শুধু হাসপাতাল নয়, স্কুল-কলেজসহ সবকিছুই পানির নিচে। সবমিলিয়ে সিলেটে একটা কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
হাসপাতালে এখন স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে দেওয়া হচ্ছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে দেওয়া হচ্ছে এটার চেয়ে বেশি জরুরি হলো মানুষ ডুবে মরছে, তাদের জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার করা। এখন তো মানুষ চিকিৎসার জন্য তেমন আসছেও না। চিকিৎসাসেবা নিতে আসার মতো কোনো উপায়ও নেই।
ডা. আহমেদুল কবির বলেন, আমাদেরকে এখন বন্যা মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। সেইসঙ্গে বন্যা পরবর্তী ডিজাস্টার হবে, সেটির জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের যে ডিজাস্টার টিম কাজ করছে, তাদেরকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে যাতে ইমিডিয়েট ক্রাইসিস ম্যানেজ করা যায়।
প্রয়োজনে ঢাকা থেকে চিকিৎসক টিম পাঠানো হবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, বন্যায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলেও আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কিন্তু বন্ধ হয়নি, যথাসম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যতদিন পারি সেবা চালু রাখব। কিন্তু ধরেন একটি কেন্দ্র পানিতে তলিয়ে গেছে, সেখানে স্বাস্থ্যসেবাটা কোথায় দাঁড়িয়ে দেবেন? আমাদের তো বাস্তবতার চিন্তাটাও করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি যেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখনও এফেক্টেড হয়নি, সেগুলোতে সেবার পরিধি বাড়ানোর।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কখনোই ব্যাহত হবে না। প্রয়োজন হলে আমরা মেডিকেল টিম পাঠিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করব। শুধু তো একটা বিল্ডিংয়ের ওপর স্বাস্থ্যসেবা নির্ভর করে না, আমরা রেস্কিউ টিমের সঙ্গে মেডিকেল টিম পাঠিয়ে হলেও সেবা নিশ্চিত করছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের দিক থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এর আগে শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টায় সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল এ সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন যুক্ত ছিলেন। এছাড়া সব অতিরিক্ত মহাপরিচালক, প্রশাসন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) বিভাগের পরিচালক, সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগীয় পরিচালক ও বিভাগের সব জেলা সিভিল সার্জনরা অংশ নেন।
এদিকে সিলেটে পানি বাড়তে থাকায় নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। শনিবার (১৮ জুন) সকালে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, সদর উপজেলাসহ আরও অনেক জায়গায় পানি বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবারের (২০ জুন) আগে বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা নেই। এভাবে টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পানি স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
টিআই/এসএসএইচ