বিচ্ছিন্ন অভিযোগে শেষ হলো ভোটগ্রহণ
বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলো। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১০৫টি কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে চলে ভোটগ্রহণ।
ভোটগ্রহণ শেষে এখন প্রস্তুতি চলছে ভোট গণনার। ভোট গণনা শেষে জানা যাবে কে হচ্ছেন কুসিকের মেয়র। পাশাপাশি জানা যাবে কারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বুধবার (১৫ জুন) দিনভর কুসিকের বিভিন্ন এলাকার ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন ভোটাররা। মেশিনে ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলা, এক বুথের ভোটাররা অন্য বুথে যাওয়া, লাইন জমিয়ে ভোটে বিলম্ব সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ ছিল ভোটারদের।
ভোটাররা অভিযোগ করেন, লাইন ধরে বুথে ভোট দিতে গেলেই বলা হয়, এই ঘরে না, ওই ঘরে যান। ওই ঘর থেকে বলে এই ঘরে যান। তাতে ভোট দিতে ৩০ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া ভোট বিলম্ব করতে এক মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের অনেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেক সময় ফিঙ্গারপ্রিন্টও মেলেনি।
তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসাররা বলেছেন, ভোট দিতে ভোটারদের কোনো অসুবিধা হয়নি। সমস্যাটা করেছেন বাইরে থেকে যারা ভোটার স্লিপ দিচ্ছেন তারা। তারা ভোটারদের সঠিক তথ্য দেননি। এ কারণে ভোটারদের ভোগান্তি হয়। যার ফলে ভোটাররা এক বুথ থেকে আরেক বুথে ঘুরে বেড়ান।
কুমিল্লা হাউজিং এস্টেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমার কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়নি। কারো কোনো অভিযোগ পাইনি।
কাটাবিল হাইস্কুলের ৭৩ নম্বর ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মামুন হোসেন বলেন, যারা বাইরে থেকে ভোটার স্লিপ দেন, তারা ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। এটা অভিযোগ ছিল এখানে।
হোচ্ছামিয়া হাইস্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বানিন রায় বলেন, আমার এখানে ১ হাজার ৮৪৭ ভোট আছে। এর মধ্যে ভোট কাস্ট হয়েছে ১ হাজার ৬ ভোট। হেভিওয়েট প্রার্থীদের কেন্দ্র ছিল এটি। সে হিসেবে এখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ভোটকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে এ কমিশন।
কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে ছয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। অর্থাৎ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী আছেন ভোটের মাঠে। ৫ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে দুজন।
আইন অনুযায়ী, প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হয় নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ। কুমিল্লা সিটির সবশেষ করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় এ বছরের ১৬ মে। ভোটগ্রহণ করতে হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। এ হিসেবে গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে এ সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়। ১৬ মের মধ্যে নির্বাচন করার কথা থাকলেও নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ সিটির কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।
এমএইচএন/এইউএ/আরএইচ