এখনও কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে, রাসায়নিকের আরও চারটি কনটেইনার শনাক্ত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আরও চারটি কনটেইনার রয়েছে যেগুলোর মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ আছে। সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল এ তথ্য জানিয়েছেন।
আজ (সোমবার) দুপুরে বিএম ডিপোর গেটে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
শনিবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটারের মতো দূরে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কনটেইনারগুলো বোমার মতো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশে থাকা দমকলকর্মী, শ্রমিক ও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ এই বিস্ফোরণের শিকার হয়ে হতাহত হন। পরপর বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়। এতে আগুন আরও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
এই কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এত বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই রাসায়নিকের কারণেই আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
সোমবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি। আগুন নেভানোর নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ঘটনাস্থলে কাজ করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।
আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, ডিপোতে থাকা চারটি কনটেইনারে রাসায়নিক পদার্থ থাকার বিষয়টি আমরা শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছি। এই কনটেনারগুলো ফায়ার সার্ভিসের দল বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে অপসারণ করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া ডিপোর ভেতরে এখনো কালো ধোঁয়া থাকায় সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ডের এই ডিপোটি তৈরি করা হয় পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানি ও রপ্তানির কনটেইনার খালাস ও পরিবহনের জন্য। এমন একটি ডিপোতে রাসায়নিক মজুদ বা সংরক্ষণ করা হবে কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু
আগুন ও বিস্ফোরণে ঠিক কতজন নিহত হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে ৪৬ জনের নিহত হওয়ার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, আগুন নেভাতে গিয়ে তাদের ৯ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতের সংখ্যা ৪৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে এর সংশোধনী দেওয়া হয়।
তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণে নিহত অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তাই তাদের পরিচয় শনাক্তে স্বজনদের ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আজ সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের সামনে নমুনা সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ২৩ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। বাকি ১৮ জনের আত্মীয়-স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নমুনার ফলাফল দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৪১ জনের লাশ এসেছিল বলে জানান তিনি। বাকি পাঁচটি মরদেহের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
তিনজনকে ঢাকায় নিতে হবে
সকালে দগ্ধদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
দগ্ধ রোগীদের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে তিনটি রোগীকে আমরা চিহ্নিত করেছি যাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া উচিত। তাদের শরীর ফুলে যাচ্ছে। এই রোগীদের বার্ন আইসিইউ খুব জরুরি। যেটা চমেকে নেই। পরিবারের সদস্যরা রাজি থাকলে তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া হাসপাতালটিতে কিছু রোগী আছে যাদের ছেড়ে দেওয়া যায়। তাদের চোখে সমস্যা হয়েছে। তাদের চোখের চিকিৎসক দেখাতে হবে।
চট্টগ্রামের বার্ন ইউনিটে মানুষকে ভিড় না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভিড়ের কারণে ইনফেকশন হতে পারে রোগীদের। ইনফেকশনের কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা প্রথম ধাক্কাটা খুব ভালোভাবে সামলেছেন। ঘটনার পরদিন পিএম আমাকে মেসেজ করে চট্টগ্রাম যেতে বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা আজ চট্টগ্রাম এলাম।
আগুন নিভতে আরও সময় লাগবে
আগুন লাগার পর প্রায় ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি নেভার খবর পাওয়া যায়নি। আজ সকাল ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখনো আগুন নেভানোর কাজ করছি। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কনটেইনারে এখনো আগুন জ্বলছে, ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমরা সাবধানতার সঙ্গে সেগুলোতে পানি দিচ্ছি। আর যেসব কনটেইনার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি সেগুলো নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছি। আমাদের ৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
কেএম/এনএফ