বাবার খোঁজে ১১ মাসের ফাইজা রহমান, দিলো ডিএনএ
ফাইজা রহমান। বয়স ১১ মাস। পৃথিবীর কোনো কিছু এখনো তার বোধগম্য হয়নি। শুধুমাত্র বাবা-বাবা ডাকতে শুরু করেছে। বাবা মানে কী তাও বুঝতে শিখেনি। শনিবার (৪ জুন) বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে পর থেকে বাবা আবদুস সোবহান রহমানের খোঁজ নেই। সব হাসপাতাল খুঁজে স্বজনরা আবদুস সোবহানের সন্ধান করতে পারেননি। পরে মা ইশপাহান সুলতানার কোলে করে ডিএনএ দিতে এসেছে ফাইজা রহমান।
সোমবার (৬ জুন) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে স্থাপিত ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে ফাইজা রহমানের নাক থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভাইয়ের লাশ শনাক্তে বোন উম্মে কুলসুমও ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর শেখরখীল এলাকার বাসিন্দা ছিলেন আবদুস সোবহান রহমান। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর আইসিটি সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মেয়েকে কোলে নিয়ে ইশপাহান সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিনার রাত ১১টার দিকে সোবহানের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভিডিও কল করে আগুন দেখিয়েছে। সেখান থেকে তাকে বারবার বলেছে বের হয়ে যেতে সে বলেছে কোনো কিছু হবে না। প্রথমে আমাকে আগুন দেখিয়ছি, এরপর আমার শাশুড়িকে। পরে বোনকে আগুন দেখানোর সময় বিকট শব্দের একটি আওয়াজ শুনতে পাই। এরপর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
তিনি বলেন, রোববার চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। তাই একমাত্র মেয়ে ডিএনএ দিতে হাসপাতালে এসেছি। মেয়ের ডিএনএ দিয়েছি। সরকারের কাছে কোনো চাওয়া নেই। সোবহানকে যেন একনজর শেষ দেখা দেখতে পারি।
তিনি আরও বলেন, মেয়ে শুধু বাবা-বাবা ডাকতে পারতো। মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে বাবাকে দেখলে বাবা-বাবা ডাকতো। এখন তো আমাদের কেউ রইলো না।
উম্মে কুলসুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার রাত থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সব হাসপাতালে খুঁজেছি। প্রত্যেকটা বেডে গিয়ে ভাইকে খুঁজেছি, পাইনি। মর্গে একটি লাশ ভাইয়ের বলে মনে হয়েছে। কিন্তু আরেকটি পরিবারও লাশটি তাদের স্বজন বলে দাবি করছে। তাই বাধ্য হয়ে ১১ মাসের জাইমাকে নিয়ে আমার ডিএনএ দিলাম। এখন অপেক্ষা কখন ভাইকে শেষবারের মতো দেখব।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের সামনে নমুনা সংগ্রহ করছে সিআইডি। সিআইডির ফরেনসিক সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যাদের মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি, তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগহ করা হচ্ছে।
বাবা-মা ভাই-বোন বা ছেলে-মেয়ের যেকোনো দুই জনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। মরদেহের সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে পরিচয় শনাক্ত করা হবে। ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
কেএম/এসএম