কে জানত এটাই মিঠুর সঙ্গে আমার শেষ দেখা!
‘সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র লিডার মিঠু দেওয়ান। বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার দিন রাতেই ফেরেন গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটি থেকে। বাড়ি থেকে জুমের আনারস এনেছিলেন আমাদের সবার জন্য। আমাকে বলেছিলেন, ট্রেনিংয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন ভালো কথা, সঙ্গে দুটি আনারস নিয়ে যান। খেয়ে অনেক মজা পাবেন। চট্টগ্রামে এগুলো পাবেন না। কে জানত এটাই হবে তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।’
বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুনে মারা যাওয়া সহকর্মীদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের আরেক লিডার আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, জীবনে হয়ত কোনো একটি ভালো কাজ করেছিলাম, যার পুরস্কার স্বরূপ আমি এখনও বেঁচে আছি। যেদিন রাতে আগুনের ঘটনা ঘটে, সেদিন রাতেই ভূমি ধসের ওপর একটি ট্রেনিংয়ের জন্য আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর পরই আমি দুর্ঘটনার খবরটি জানতে পারি। জরুরি অবস্থার জন্য ট্রেনিংটিও বাদ দিতে হয়েছে। বর্তমানে আমাদের স্টেশনেই আছি।
আতিকুর রহমান বলেন, মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যে মানুষগুলোর পদচারণায় অফিস সারাদিন মুখরিত থাকত, তাদের অনেকেই আজ নেই। আগুন নেভাতে কুমিরা ফায়ার স্টেশন থেকে ১৫ জন কর্মী সেখানে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৬ জন মারা গেছেন এক জন নিখোঁজ। ৬ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
‘মাত্র ৩-৪ জন কর্মী নিয়ে এই কঠিন অবস্থার মধ্যে অফিস চালাতে হচ্ছে। কাজের মধ্যে বার বার প্রিয় সহকর্মীদের মুখগুলো ভেসে উঠছিল। ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করলে কী হবে, আমরাও মানুষ। আমাদেরও কষ্ট লাগে। কিন্তু সেটা সবাইকে বুঝতে দেওয়া যায় না।নিজেকে ঠিক রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
তিনি বলেন, কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা বার বার এসে আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ইউনিট আরও বাড়ানো হয়। এখন ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের ১৮৩ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। রোববার সকালে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর একটি দল। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপো ২৪ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি মূলত পণ্য রপ্তানিতে কাজ করে। এখান থেকে পণ্য রপ্তানির জন্য কনটেইনারগুলো প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। ৩৮ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ঘটনার সময় সেখানে ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অন্তত ২০০ শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে সেখানে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ তখন ছিলেন তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।
এমএইচএস