সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর আগুনে নিহত ৩, আহত দেড় শতাধিক
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে তিনজন নিহত ও প্রায় দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (৪ মে) রাতে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ আগুনের ঘটনায় ৮ জনের মত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এম এ কফিল উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের ১৩টি ইউনিট কাজ করছিল। ফায়ার ফাইটাররা কাছ থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। এ পর্যন্ত ২১ জন ফায়ার ফাইটারের আহত হওয়ার খবর এসেছে। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে সিএমএইচে নেওয়া হচ্ছে। আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কনটেইনারে রাসায়নিক ছিল বলে আমরা ধারণা করছি। তবে ঠিক কী রাসায়নিক ছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি। আহত কয়েজনের অবস্থা গুরুতর।
বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, কী কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কনটেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতাহতদের পাশে থাকব বলে ঘোষণা দিচ্ছি। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করব। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি সব হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই পাশে থাকুন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক জীম বলেন, আমরা হাসপাতালে আহতদের জায়গা করতে পারছি না। আহতদের মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে ঢাকায় রেফার্ড করেছি। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন।
রক্তদানকারী বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীদের হাসপাতালে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন বলেন, বিস্ফোরণস্থলের কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। ডিপো এলাকার আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লা, ফেনীসহ আশপাশের জেলার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। বিস্ফোরণস্থলের ১ কিলোমিটার এলাকার অনেক বাসাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক সাঙ্গুর সম্পাদক কবির হোসেন সিদ্দিকী বলেন, বিস্ফোরণের সময় ডিপো এলাকায় ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। ডিপোতে আগুনের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার রুবেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ২টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। ফায়ার ফাইটারদের অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩ জন ফায়ার ফাইটার নিখোঁজ রয়েছেন। আমাদের কর্মকর্তারা আহতদের দেখতে হাসপাতালে গেছেন।
এর আগে শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট কাজ করছে।
ডিপোতে আমদানি ও রপ্তানির বিভিন্ন মালবাহী কনটেইনার আছে বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন লাগার পর বেশ কয়েকটি কনটেইনারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কনটেইনারে রসায়নিক থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
কেএম/আইএসএইচ