আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি তারা পদত্যাগ চাইছে, করব কি না?
বাণিজ্যমন্ত্রীর টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি বলছে- বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমি একটা কথা সব সময় বলে এসেছি, আমার এ পদের (বাণিজ্যমন্ত্রী) লোভ নেই। এক মুহূর্তের জন্য লোভ নেই।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর রেলওয়ে পোলোগ্রাউন্ড মাঠে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এ বাণিজ্য মেলার আয়োজন করেছে।
তেলের দাম প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, কেউ যদি আমাকে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলে তেলের দামটা কমিয়ে দিতে পারে, মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার পাম ওয়েলের দাম কমিয়ে দিতে পারে। সেখানে দাম কমলে তো আমরা কমেই পেতাম। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি তারা (সিপিবি) আমার পদত্যাগ চাইছে, পদত্যাগ করব কি না? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা পদত্যাগ চেয়েছেন তাদের জিজ্ঞেস করো তারা দাম কমাতে পারবে কি না, কমাতে পারলে মন্ত্রী করবো।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের চেয়েও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ১৫ টাকা এবং পাকিস্তানে ৩৬ টাকা বেশির দরে তেল বিক্রি হচ্ছে। সারা বিশ্বে তেলের দাম বেড়েছে। আমরা ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভর। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলে তেলের দাম বেড়ে যায়, আমরা কীভাবে কম দামে খাওয়াব। আমাদের চাল, গম আমাদের আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আমাদের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির ভয় দেখাচ্ছে। চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকি মূল্যে নিম্নআয়ের মানুষকে কম মূল্য পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে খাবার দিয়েছি। তারপরও কথা শুনতে হচ্ছে। কেউ কথা শুনতেই চায় না। সমালোচনার জন্য কথা কথা বলেই যাচ্ছে।
প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চট্টগ্রাম দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফ লাইন। তাই এই অঞ্চলকে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করতে হবে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে চট্টগ্রামসহ ব্যবসায়ীরা প্রশস্ততার পথ দেখাবে।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাস্তবতার নিরিখে হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অপরিসীম অবদান রয়েছে। তাই তাদের সব প্রয়োজন সরকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫শ ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে বলা যায় ‘ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ’।
মেলা উদ্বোধনের পর বাণিজ্যমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের পণ্যের দাম ওঠা নামা করে। বিশ্বের বাজারে দাম কমে এলে দেশে দাম কমে আসবে।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম ও বন্দরের ইতিহাস হাজার বছরের। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করতে হলে বাণিজ্যের সকল উপাদান চট্টগ্রামে থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে। কর্ণফুলী টানেল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে প্রথম। মিরসরাই ইকোনমিক জোনে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কাজেই চট্টগ্রামের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত ২৮ বছর ধরে চেম্বার দেশীয় বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও পরিচিতির সুবিধার্থে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯তম মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি মেলার জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যুর দাবি জানান যেখানে বছরব্যাপী সব ব্যবসায়ী সংগঠন মেলা আয়োজন করতে পারেন।
উল্লেখ্য, মাসব্যাপী এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পোলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। মেলার ব্যাপ্তি প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট। এতে ১৭টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৩৬টি প্রিমিয়ার স্টল, ৯৯টি গোল্ড স্টল, ৪৮টি মেগাস্ট ১৪টি ফুড স্টল, ২টি আলাদা লোন নিয়ে ৩৭০টি স্টলে ৩১০ এর বেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। টিকিটের মূল্য ১৫ টাকা।
আজ মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখনও বেশিরভাগ স্টল ও প্যাভিলয়নের কাজ বাকি রয়েছে।
কেএম/এনএফ