দেশের পথে গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ
অমর একুশে গানের রচয়িতা, প্রবীণ সাংবাদিক, কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার পথে রওনা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট।
শুক্রবার (২৭ মে) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১২টার দিকে গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে (বিজি ২০২) ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওনা করেছে বলে এক বার্তায় জানায় লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন।
হাইকমিশন জানায়, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে (বিজি ২০২) লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় রওনা দিয়েছে। মরদেহ শনিবার (২৮ মে) দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে। একই ফ্লাইটে মরহুম আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরাও ঢাকায় আসছেন।
গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ বিমানে তোলার সময় যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন সাইদা মুনা তাসনিম হিথ্রো এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকার বিমানবন্দরে মরহুম গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ এসে পৌঁছালে গ্রহণ করবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে তার মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় তার মরদেহ জাতীয় প্রেস ক্লাবে নেওয়া হবে। বিকেল সাড়ে ৫টায় তার মরদেহ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য বলছে, সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ দেশে আনা হচ্ছে।
গত ১৯ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাফ্ফার চৌধুরী। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৮ বছর। ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
গত শুক্রবার (২০ মে) পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইন মসজিদে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পূর্ব লন্ডনের ঐতিহাসিক শহীদ আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ২৩ মে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন গাফ্ফার চৌধুরী স্মরণে পূর্ব লন্ডনে এক মিলাদ মাহফিল ও শোকসভার আয়োজন করে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুলে পড়ার সময় কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত কংগ্রেস হিতৈষী পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।
১৯৪৯ সালে তার প্রথম গল্প ছাপা হয় সওগাত পত্রিকায়। পরে দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক সংবাদ, মাসিক সওগাত, মাসিক নকীব পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জয় বাংলা, যুগান্তর ও আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেন।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেসকো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
এনআই/ওএফ