স্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেকের বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক মো. আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে সোয়া তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আজই কমিশন থেকে মামলা অনুমোদন করা হয়।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মামলা দুটি দায়ের করেন। উভয় মামলাতেই মালেককে আসামি করা হয়েছে। দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য ঢাকা পোস্ট-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, অনুসন্ধান কর্মকর্তা গাড়িচালক মালেকের সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মোট দুই কোটি ৯৯ হাজার ৪০ টাকার সম্পদের সন্ধান পান। যার বিপরীতে বৈধ আয় পাওয়া যায় মাত্র ৬০ লাখ ৯ হাজার ৩৪২ টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে মালেকের বিরুদ্ধে ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও এক কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে, অপর মামলায় মো. আব্দুল মালেকসহ তার স্ত্রীকে আসামি করা হয়। এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ড্রাইভার মালেকের স্ত্রী নার্গিস বেগমের অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩১ টাকা। ওই সম্পদের বিপরীতে বৈধ উৎস থেকে এসেছে এক কোটি এক লাখ ৪৩ হাজার ৩৮২ টাকা। অবশিষ্ট এক কোটি ১০ লাখ ৯২ হাজার ৫০ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত।
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পারস্পরিক যোগসাজশে তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের ভোগ দখলে রাখায় প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- তুরাগের একটি টিনশেড বাড়ি, গরুর খামার ও সাততলা বাড়ির কিছু অংশ। অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গাড়িচালক মালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি টাকার জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব-১ এর পরিদর্শক (শহর ও যান) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। এরপর তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
আবদুল মালেক র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পরের দিন দুদক জানায়, আগে থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম’ সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবদুল মালেক অষ্টম শ্রেণি পাস। তিনি ১৯৮২ সালে প্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। বছর চারেক পর অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে যোগ দেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল।
আরএম/এফআর