ঝুঁকি নিয়ে পিকআপে ঈদযাত্রা
এরশাদ আলী, প্রায় ৭ বছর ধরে রাজধানীতে রিকশা চালান। দুই ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে কড়াইল বস্তিতে থাকছেন ৩ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে। কড়াইল বস্তির এক ঘরে এরশাদ আলী সংসার। একদিন পরেই ঈদ, তাই গত কয়েকদিন ধরে পরিশ্রম একটু বেশিই করেছেন তিনি। কারণ গত দুই বছর ঢাকায় ছিলেন, এবার ঈদে বাড়ি যাবেন। বাড়িতে অপেক্ষায় থাকা বাবা-মা, ছোট ভাই, বোন, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের ছেলে সবাইকে ঈদে পোশাক কিনে দেবেন।
স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঈদে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যাওয়ার সময় নির্ধারণ করেছেন ঈদের আগের দিন রাত। কিন্তু কড়াইল বস্তিতে অন্য যাদের বাড়ি ময়মনসিংহ তাদের কাছ থেকে শুনেছেন, মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ যেতে বাস ভাড়া বেড়ে গেছে, ৭০০/৮০০ যার কাছে যত পাওয়া যায় আদায় করছে।
রমজান মাসজুড়ে অতিরিক্ত সময় রিকশা চালিয়ে যে টাকা এরশাদ আলী আয় করেছেন তার বেশিরভাগ দিয়েই পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছেন। সব মিলিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করা, ঈদের বাজার আর ঢাকায় ফিরে আসার অল্প কিছু টাকা আছে এরশাদ আলীর কাছে। সবমিলয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। এরইমধ্যে বস্তির তার ভাড়া ঘরের দুই তিন ঘর পরে থাকা মজনু মিয়া তাকে জানায় রাতে ময়মনসিংহ যাদের বাড়ি তাদের নিয়ে পিকআপ ছেড়ে যাবে, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে। আর সেখানে বাচ্চাদের ভাড়া লাগবে না।
এমন খবর শুনে এরশাদ আলী রোববার (১ মে) রাতে শাহজাদপুরের পেছনের দিকে গুলশান ২ সংলগ্ন গুপিপাড়ার লেকপাড় রাস্তায় এসেছেন। এখানেই কথা হয় এরশাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাসে ৭০০/৮০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে, তাও আবার বেশিরভাগ বাসে সিট নেই। তাই যখন শুনলাম এখান থেকে পিকআপ যাবে তখন ব্যাগ-বোচকা নিয়ে পরিবারের সবাই মিলে চলে এলাম। কথা হয়েছে ৫০০ টাকা করে দুইজনের ভাড়া দিব আমরা। আমার মতো আরও ৩০/৪০ জন এই পিকআপের যাত্রী।
রিকশায় এসে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপের পেছনের দিকে এসে নামলেন বাচ্চু মিয়া। তিনিও স্ত্রী আর ছোট মেয়েকে নিয়ে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য এখানে এসেছেন। পরিবার নিয়ে তেজগাঁও সিদ্দিক মাস্টার ঢালের একটি বস্তিতে বসবাস করেন বাচ্চু মিয়া, ভ্যানে ফেরি করে সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পিকআপের পেছনের দিকে বাচ্চু মিয়া যখন বস্তা তুলছিলেন তখন আলাপ হয় তার সঙ্গে। আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা কম আয়ের মানুষ, বাসে অনেক ভাড়া। তাই আমাদের মতো মানুষরা মিলেই এই পিকআপে যাচ্ছি। একটু কম পেলেই আমরাদের জন্য বিরাট উপকার।
এই ট্রাকেই যাত্রী হিসেবে যাওয়া গুপিপাড়ায় টিনশেডের বস্তিবাসার বাসিন্দা রবিউলের স্ত্রী আকলিমা বলেন, আমাদের বস্তিতে যাদের বাড়ি ময়মনসিংহ তারা মিলেই এই পিকআপ ঠিক করেছে। দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যেতে একটু কষ্ট, কিন্তু টাকাতো কম লাগবে! তবুও তো বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে পারব।
ঈদ এলে কর্মব্যস্ত একঘেয়েমি জীবনের সাময়িক বিরতি দিয়ে কর্মজীবী মানুষের সামনে আসে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মুহূর্ত। বিগত দুই বছর করোনাকালীন সময় সেভাবে ঢল নামেনি ঈদে নাড়ির টানে মানুষের বাড়ি ফেরার। কিন্তু এবার ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকে বলতে গেলে বাড়ি ফেরার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এরপর থেকে ফাঁকা হতে শুরু করে রাজধানী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সদা জাগ্রত এ নগর কোলাহলপূর্ণ থাকলেও এখন নেই চিরচেনা সেই চিত্র। ঢাকা এখন ফাঁকা।
এএসএস/জেডএস