শেষ বিকেলে সদরঘাটে উপচে পড়া ভিড়
আর মাত্র কয়েক দিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল ফিতর। আর প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে ঘরমুখো লাখো মানুষ। তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূলত এ চাপ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়।
লঞ্চ টার্মিনালে সকাল থেকেই যাত্রী বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মাঝে একটু কমলেও দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ ভিড় আবার বাড়তে শুরু করেছে। কেউ পরিবার নিয়ে আবার কেউবা একা যাচ্ছেন বাড়ি প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে। সবার মধ্যে আপনালয়ে ফেরার তাড়ায় যেন বাড়তি উচ্ছ্বাস কাজ করছে।
আর এদিকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সারি-সারি লঞ্চ দাঁড়িয়ে রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রীদের নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যাত্রীদের লঞ্চে তোলার জন্য হাঁক-ডাক দিচ্ছেন কর্মচারীরা। যাত্রীরাও নিজ গন্তব্যের লঞ্চে দ্রুত উঠেছেন। মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে বিশাল বড় বড় লঞ্চ পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যাত্রী বেশি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনেক লঞ্চ ঘাট ছেড়ে দিচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মো. আনোয়ার পরিবার নিয়ে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এম ভি এ আর খান লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে ঘাটে অনেক লোকের ভিড়। লঞ্চে ঠিকভাবে উঠতে পারলেই হয়। একা হলে সমস্যা ছিল না, পরিবার নিয়ে এতো ভিড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠতে অনেক কষ্ট।
এমডি পূবালী-১ লঞ্চে করে রাজধানীর বসিলার বাসিন্দা সোহেল রানা বরগুনায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে। তিনি বলেন, ঘাটে ভিড় এবং যাত্রী বেশি থাকলেও সময় মতো লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। আর ভিড় ঠেলে লঞ্চে উঠতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।
অন্যদিকে যাত্রী বেশি হওয়ায় অনেকেই আবার লঞ্চে উঠতে পারেনি। তাই পরবর্তী লঞ্চের জন্য ট্রার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। পরিবার নিয়ে এই অপেক্ষাটা অনেকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশন অভিমুখি এমভি কর্ণফুলী-১২ লঞ্চের যাত্রী ছিলেম সজীব হোসেন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে লঞ্চে উঠতে পারেননি। তিনি জানান, প্রচুর যাত্রী চাপ ঘাটে। লঞ্চের টিকিট কেটেও উঠতে পারলাম না। এতো মানুষের ভিড় কোনোভাবেই লঞ্চে উঠতে পারিনি। এখন পরবর্তী লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছি। যাত্রীদের যে ভিড় সন্ধ্যার দিকেও উঠতে পারব কিনা সন্দেহ।
তবে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও পর্যাপ্ত সংখ্যক লঞ্চ যাত্রার জন্য তৈরি হয়েছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, ঈদ যাত্রার জন্য ১৫০টিরও বেশি লঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। বিকেলে ৫০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ঘাট ছেড়ে গেছে। আর ৭০টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে যাত্রীদের জন্য। যাত্রীদের জন্য কোনো লঞ্চ সংকট হবে না।
এদিকে আগত যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নৌ পুলিশ। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে নৌ পুলিশ
এ বিষয়ে সদরঘাট নৌ পুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়ুম আলী সরদার বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়া ঈদযাত্রায় জননিরাপত্তার কোন ঘাটতি না থাকে সেদিকেও আমাদের নজর রয়েছে। অপরাধীরা মানুষের ভিড় দেখে যেন কোনো ধরনের অপরাধ না করতে পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
এমএসি/এসএম