র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় দূতাবাসের ব্যর্থতা
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তাদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুষছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কমিটির আগের বৈঠকে আলোচিত এ বিষয়গুলো বুধবারের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে ওয়াসিংটন দূতাবাস আগে থেকে অবহিত না হওয়ার বিষয়টি বড় ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন। তিনি মালয়েশিয়া ও লেবানন দূতাবাসের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ তোলেন। আমেরিকা ইউরোপসহ সব মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, সরকারকে বিশ্ববাসীর কাছে বিতর্কিত করতে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এ অপপ্রচার মোকাবিলায় বিদেশে অবস্থিতি বিভিন্ন মিশন তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হচ্ছে।
হাবিবে মিল্লাত বলেন, বিরোধী দলগুলো বাংলাদেশের ভারমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য যেভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে সেখানে মিশনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে গুম, বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান।
তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোই লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সেই দেশের আইন প্রণেতাদের সম্পর্কটা তেমন ঘনিষ্ঠ না হওয়ার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্ট ফার্মগুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রশ্ন রয়েছে বিধায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, যথা সময়ে তথ্যগুলো পেলে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ/সংস্থাগুলোর কাছে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশকে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না। অবশ্য অপ্রচার মোকাবিলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মিশনগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র সচিব শাব্বির আহমদ বলেন, সরকার বিরোধী একটি চক্র বিপুল অর্থের বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভুল ও অসত্য তথ্য দিয়ে দেশের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার লক্ষ্যে দূতাবাসগুলো কাজ করে গেলেও সেভাবে সফলতা আসেনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা উইংয়ের ডিজি ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বাইডেন সরকার আসার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা ওয়াশিংটন মিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক আলোচনার সুযোগ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কোনো ফোরামে উপস্থাপন না করে এট খুব গোপনীয়ভাবে করেছে।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, হাবিবে মিল্লাত।
এইউএ/এসএম