মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট প্রথা বাতিলের দাবি
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠাতে সব ধরনের সিন্ডিকেট প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বায়রা সিন্ডিকেটবিরোধী মহাজোট। একইসঙ্গে মালয়েশিয়ার অন্য ১৩টি সোর্স কান্ট্রির মতো সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমবাজারটি উন্মুক্তেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বায়রা সিন্ডিকেটবিরোধী মহাজোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানান বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া শ্রমবাজার সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বারবার বলেছেন, কম খরচে বাজার সকলের জন্য উন্মুক্ত করবেন, যাত্রীদের শুধু একবার মেডিকেল করার ব্যবস্থা করবেন, এমওইউ অনুযায়ী জেডব্লিউসি মিটিং করে সিস্টেম ঠিক করবেন, আইএলও কনভেনশন অনুসরণ করবেন, স্বল্প খরচে যাওয়ার জন্য ডাটা ব্যাংক থেকে কর্মী নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন, অন্য ১৩টি দেশের ন্যায় কর্মী যাবে এবং বাংলাদেশের অনলাইন সিস্টেম চালুর ব্যবস্থা করবেন। আমরা মন্ত্রীর উপরোক্ত সকল বক্তব্যের সঙ্গে একমত এবং আমাদের প্রত্যাশা তিনি তার বক্তব্যে অবিচল থাকবেন।
তবুও সম্ভাব্য ২৫ সিন্ডিকেটের সদস্যরা অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করছে। ইতিমধ্যে তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে মেডিকেল সেন্টারের বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে।
আলী হয়াদার চৌধুরী বলেন, ১০ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালু হওয়া ২০১৬ সালের মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কারণে মাত্র দেড় বছরের মাথায় মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। বাতিল করে এসপিপিএ নামে ১০ এজেন্সির অটো ডিস্ট্রিবিউশন পদ্ধতি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শুরু হওয়া শ্রমবাজার এবং অনিয়মের ফলে বাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়া, উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই দেশের নিরীহ কর্মীরা, দেশ বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের কারণে বিনষ্ট হয় দেশের ভাবমূর্তি। সেইসাথে এই দেশের গরিব নিরীহ কর্মহীন মানুষ বঞ্চিত হয় বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে।
তিনি জানান— পূর্বের ন্যায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের কিছু সংখ্যক ব্যক্তির দেশ বিরোধী তৎপরতা চরিতার্থ হবে; প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় ১ হাজার কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন ব্যাহত হবে; অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দেশি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে, যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। ফলে সরকার ও দেশের সুনাম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে; সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করলে কর্মী প্রেরণের গতি যেমন কমে যাবে, তেমনি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের ব্যবসার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এবং শ্রম বাজার দীর্ঘায়িত না হয়ে পূর্বের ন্যায় যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরে অনিয়ম, অরাজকতা, পারস্পরিক রেষারেষি বৃদ্ধি পাবে; মালয়েশিয়া আরও ১৩টি সোর্স কান্ট্রি থেকে সিন্ডিকেটবিহীন স্বাভাবিক নিয়মে কর্মী আমদানির বিপরীতে শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক আমদানি করলে, সেটি হবে স্বাধীন দেশের জন্য অমর্যাদাকর; মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় ও শ্রমিক শোষণের কারণে, আন্তর্জাতিকভাবে সে দেশের কিছু কিছু কোম্পানির প্রোডাক্ট কানাডা, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের শ্রম বাজারকে প্রভাবিত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি