সহজে কঠিন, কাউন্টারে চাপ ১০ গুণ
সকাল ৮টা বাজলেই শুরু হয় অনলাইনে রেলের টিকিট কাটার তোড়জোড়। টিকিট বেচাকেনার জন্য নতুন চুক্তিবদ্ধ সহজ ডটকমের ওয়েবসাইটের বেহাল দশার কারণে অনলাইনে টিকিট পাওয়া এক রকম ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাইটে প্রবেশের ৭ মিনিটের মাথায় দেখা যায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
অন্যদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের কথা তো সবার জানা। অগ্রিম টিকিটের চাপে পড়েছে পুরো স্টেশন পাড়া। ৩০ এপ্রিলের টিকিট আজ দেওয়া শুরু হলেও স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের চাপ গতকাল থেকেই। লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই অধিকাংশের। কারণ মোট টিকিটের সংখ্যার চেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ১০ গুণ বেশি মানুষ।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৭টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় পুরো স্টেশন চত্বরে টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের ভিড় লেগে আছে। লাইনের মাথা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বের করা কঠিন। একেক লাইনে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। এদের অধিকাংশই গতকাল ২৯ এপ্রিলের টিকিট না পেয়ে রেলস্টেশনে থেকে গেছেন ৩০ এপ্রিলের টিকিট পাওয়ার আশায়। লাইনে নতুন করে কেউ ঢুকলেই শোরগোল পড়ে যাচ্ছে পুরো স্টেশন চত্বরে!
টিকিট প্রত্যাশীদের অনেককে আবার স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ সে প্রচেষ্টায় পেয়েও যাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ।
কথা হয় একটি লাইনে দাঁড়ানো রুবেল মিয়ার সঙ্গ। তিনি যাবেন রংপুর। গতকাল লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, কাল রাতে অপেক্ষমাণদের মধ্যে নিজেরা সিরিয়াল বানিয়ে থেকে গেছি। আজ সকালে লাইনে দাঁড়িয়েই নিজের ফোনে চেষ্টা করছিলাম অনলাইনে টিকিট কাটার। ভাগ্যগুণে পেয়ে গেছি।
লালমনিরহাটের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন সেলিমহোসেন। বলেন, শুধু দুটো টিকিট দরকার। এজন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি গতকাল। তবুও যেন আশা নেই। তাই অনলাইনেও চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
এদিকে দুদিনের চেষ্টাতেও টিকিট না পেয়ে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদেরই একজন আব্দুল আওয়াল। তিনি বলেন, অনলাইন বুঝি না, তাই কাউন্টারে অপেক্ষা করছি। দীর্ঘ লাইন, টিকিট পাব কি না সেই আশা নেই। তবুও দাঁড়িয়ে আছি, যদি......।
রাজশাহী রুটের টিকিট প্রত্যাশী সবুজ মিয়া জানান, আমার দরকার দুটি টিকিট। লাইনে দাঁড়িয়েই অনলাইনে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। একটি টিকিট পেয়েও গিয়েছিলাম। সেটি কিনতে পারিনি পেমেন্ট ডিজেবল সমস্যায়। এখন কাউন্টারই ভরসা।
অনলাইনে টিকিট প্রত্যাশীরা জানান, সার্ভারে চাপ অনেক বেশি। ঢোকাই যাচ্ছে না। ঢুকতে পারলেও সিট বুকড দেখাচ্ছে। আবার সিট থাকলেও পেমেন্ট থেকে যাচ্ছে পেন্ডিংয়ে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছেন, ঈদ যাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে পারবেন। এরমধ্যে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে ২৭ হাজার। এখন সবাই যদি ট্রেনে যেতে চান সেটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
এই স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল বলেছেন, কালকের টিকিটের জন্য যদি মানুষ আজ লাইনে দাঁড়ায়, তাহলে আমাদের কী করার আছে। আজকের টিকিট নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ নেই। আমরা তো সিস্টেম করেছি, এখানে অন্য কোনো সুযোগ নেই। কারণ আপনার টিকিটে আমি যেতে পারব না।
মন্ত্রী বলেন, চাহিদার তুলনায় আমাদের ট্রেনের সংখ্যা কম। ঈদে ৫০ লাখ মানুষ প্রতিদিন রাজধানী ছাড়বে। অথচ রাস্তার সক্ষমতা হলো মাত্র ১৫ লাখ। অনলাইনে সবাই টিকিট পাবেন না। পাঁচ লাখ মানুষ যদি যেতে চায়, আমি তো সবাইকে টিকিট দিতে পারব না।
জেইউ/এমএইচএস