চলতি যাত্রায় কল্যাণপুর-গাবতলীতে মানুষের ঢল
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি এখনও চলছে। প্রায় সব কাউন্টারে মিলছে অগ্রিম টিকিট। অন্যদিকে, ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি যাত্রার টিকিটও বিক্রি করছে বাস কর্তৃপক্ষ। চলতি যাত্রার টিকিটের চাপ বেড়েছে রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর ও শ্যামলীর বিভিন্ন কাউন্টারে। সরেজমিনে কাউন্টারগুলো পরিদর্শনে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। ওইদিন সকাল থেকে ঈদ যাত্রার (২৬ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত) বিভিন্ন রুটে বাসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর কল্যাণপুর, গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কাউন্টারে চলতি যাত্রীর চাপ। কাউন্টারে টিকিটও মিলছে। যাত্রীর চাপ সামলাতে বাস কাউন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বৃষ্টি বিবেচনায় কোনো কোনো কাউন্টারের সামনে তাঁবু বা সামিয়ানা লাগানো হয়েছে।
কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ১নং কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। টিকিট কিনছেন, বাসে উঠে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে।
কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর রুটের টিকিট বিক্রি হচ্ছে গাবতলী বালুর মাঠ কাউন্টারে। লালমনিরহাট রুটের টিকিট টেকনিক্যালে এবং গাইবান্ধা রুটের টিকিট বিক্রি হচ্ছে কল্যাণপুর ৩নং কাউন্টারে।
কল্যাণপুরে হানিফের ১নং কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে চলতি যাত্রার টিকিট। তবে সেখানে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম।
কল্যাণপুর ১নং হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত সাড়ে আটটার গাড়িটির সর্বশেষ স্টপেজ নীলফামারী চিলাহাটি। সব কাউন্টার মিলে ৪০ সিটের বাসটির ৩১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদিনে ১২টির মতো গাড়ি গেছে। যাত্রী দিনে কম ছিল। তবে রাতের যাত্রীর চাপ আছে। আর অগ্রিম টিকিটের চাপ বেশি ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের। ১ মের টিকেটের চাপ নেই।
তবে যাত্রীর চাপ বেশি বলছেন শ্যামলী এন আর বাসের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সাগর। তিনি বলেন, রাজশাহীর রুটে একটা বাস গেছে। এ রুটে গাড়ি কম। তাই চাপ বেশি। সারাদিনে এখান থেকে মাত্র তিনটি বাস ছেড়ে যায় গন্তব্যে। যে কারণে চাপ বেশি। চলতি যাত্রার আজ সব টিকিট শেষ।
নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. নয়ন মিয়া বলেন, রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গ রুটে ৪৩টি বাস ছেড়ে যাবে। আজ অন্য দিনের তুলনায় চলতি যাত্রার চাপ বেশি।
তিনি বলেন, ২৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি। ওই দিন সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ কর্মদিবস। বিকেল থেকে তারা বাড়ির পথে পা বাড়াবেন। এ কারণে বিকেল থেকেই চাপটা বেশি থাকবে। অন্যদিকে, ৩০ এপ্রিল (শনিবার) বেসরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি হবে। ওই দিন তাদের চাপ থাকবে।
অগ্রিম টিকিটের তালিকায় অধিকাংশ টিকিটই বিক্রি শেষ হয়েছে, জানান মো. নয়ন মিয়া।
সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আগামী ২ থেকে ৪ মে তিন দিন ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। তার আগে ১ মে শ্রমিক দিবস তথা মে দিবসের ছুটি। এর আগে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
কল্যাণপুরে কথা হয়, গ্রামীণ ট্রাভেলস কাউন্টারের রাজশাহীর যাত্রী মিনহাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটি স্কুলে চাকরি করি। স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ঈদ উপলক্ষে ছুটি বেশিই পাচ্ছি। স্ত্রী-পরিবারের জন্য সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কেনাকাটা সম্পন্ন করেছি। রাতের বাসে বাড়ি যাচ্ছি।
গাবতলীতে পটুয়াখালী রুটের যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবিদ হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ক্লাস-পরীক্ষার চাপ নেই। ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার চাপ বাড়ার আগেই বিড়ম্বনা এড়াতে আজ রাতেই বাড়ি যাচ্ছি। অনেক দিন পর স্বজনদের সঙ্গে দেখা হবে ভেবে ভালো লাগছে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, চলতি যাত্রায় যাত্রীর চাপ বুঝে কাউন্টারগুলোতে সার্বিক প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে চাপ বেড়েছে। কাউন্টারে এসে টিকিট কেটে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
জেইউ/আইএসএইচ