পাতাল রেল প্রকল্পে পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় অনুপস্থিত : আইপিডি
ঢাকা পাতাল রেল প্রকল্পের ক্ষেত্রে নগরের অন্যান্য পরিকল্পনার সঙ্গে এর সমন্বয়ের বিষয়গুলো সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে অনুপস্থিত বলে মনে করছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
শুক্রবার ‘ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্প-টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতায় উপযোগিতা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংলাপে বিষয়টি উঠে আসে। আইপিডি ভার্চুয়াল এ সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে বক্তারা বলেন, ঢাকা পাতাল রেল প্রকল্প নগরের টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতায় কতটা উপযোগী, তা সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। পরিবহন পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনায় এ প্রকল্পের সামগ্রিক অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভৌত, পরিকল্পনাগত ও পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, এসবের অধিকাংশকেই প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে।
আইপিডির নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের অংশ হিসেবে কয়েকটি রুটে সাবওয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই প্রস্তাবনার অর্থনৈতিক ও পরিকল্পনাগত দিক নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ এবং অংশীজন আলোচনা সেভাবে করা হয়নি। এর বাইরে গিয়ে ঢাকা শহরের কেন্দ্রীয় এলাকা ও আঞ্চলিক এলাকাসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিস্তৃত সাবওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার যে প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার, তা ঢাকাসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণে অপরিণামদর্শী।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, সমগ্র দেশের উন্নয়ন বাজেটের তুলনায় অতি ব্যয়বহুল এ প্রকল্প দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনার মূল দলিলে পাতাল রেলের প্রস্তাবনা ছিল না।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের শহরের মানুষ, অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে পাতাল রেল প্রকল্প মানানসই নয় এবং একইসঙ্গে এর সামগ্রিক ব্যয় অতি উচ্চ। সাবওয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৩২০ কোটি টাকা অপচয় না করে ঢাকা শহরে এ টাকা দিয়ে অনেকগুলো মানসম্মত বাস নামালেও ঢাকার ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর হত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, সাবওয়ে প্রকল্পের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে পেশাজীবী সত্যতা ও সততার নির্মোহ প্রকাশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রকল্পকে অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই তৈরি করা হয়। সাবওয়ে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিদেশি পরামর্শকদের বাংলাদেশ ও ঢাকা মহানগরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বাস্তবতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাব রয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল পাতাল রেল নির্মাণের জন্য উপযুক্ত হলে ও ঢাকার আশেপাশের অন্যান্য অঞ্চল এর ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সাবওয়ে নির্মাণের জন্য যথাযথ নয়। ফলে ঢাকার আশেপাশে পাতাল রেলের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ব্যয় হবে তুলনামূলক অনেক বেশি। ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনা ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত রিং রোড, রেডিয়াল রোড, বৃত্তাকার রেলপথ প্রভৃতি উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকার টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
এএসএস/আরএইচ