প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব পাস
‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতীয় সংসদ।
বুধবার মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান কার্যপ্রণালী বিধি-১৪৭ অনুযায়ী একটি সাধারণ প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবের ওপর প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষ তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার সময় সংসদ সদস্যরা অধিবেশন কক্ষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
প্রস্তাবে শাজাহান খান বলেন, ‘...‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণার যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন এ জাতির ছিল তা পূরণ হওয়ায় বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদকে এ বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হোক।’
প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা বলেন, জয় বাংলা দলীয় স্লোগান ছিল না, এটা শুধু যুদ্ধের স্লোগান নয়, এটা ছিল আমাদের জাতীয় স্লোগান। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমাদের জাতীয় জীবনে এই অর্জন ধরে রাখতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই স্লোগানের চেতনাকে ধরে রাখার আহ্বান জানাই।
প্রস্তাব উত্থাপনকালে শাজাহান খান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে বাঙালি জাতির অপরিহার্য স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগানকে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তাদের রণধ্বনি ছিল ‘জয় বাংলা’। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান হিসেবে জয় বাংলা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। স্বাধীনতার পর জয় বাংলা স্লোগানকে বাঙালি জাতি মনে প্রাণে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখলদার মোস্তাক-জিয়া গং জয় বাংলার পরিবর্তে পাকিস্তানি ভাবধারায় বাংলাদেশ জিন্দাবাদকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করে।’
প্রস্তাব উত্থাপনকালে তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- (ক) ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে (খ) সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা/ কর্মচারীবৃন্দ সকল জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন (গ) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশ সমাপ্তির পর এবং সভা-সমাবেশ সমাপ্তির পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষকগণ ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করবেন।’
পরে এ বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কাজী ফিরোজ রশীদ, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিএনপির হারুনুর রশীদ, সংরক্ষিত আসনের সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান ও ফরিদা খানম।
দুই বছর আগে হাইকোর্টের এক রায়ে জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার আলোকে ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে ২ মার্চ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
এইউএ/এসকেডি/জেএস