সিআরবিতে হাসপাতাল করার আইনগত ভিত্তি নেই
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সিআরবিতে হাসপাতাল করার কোনো ধরনের আইনগত ভিত্তি নেই। ঢাকার পর চট্টগ্রাম সবচেয়ে দূষিত নগর। এই নগরের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সবুজে ঘেরা জায়গা সিআরবি।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আপনাদের অবহিত করতে চাই যদি শেষ পর্যন্ত তারা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তখন আমরা অনুমোদন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব। আমি মনে করি জনগণের আন্দোলন অনেক বেশি শক্তিশালী।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চরিত্র হচ্ছে আর কোনোভাবে না পারলে এসব ক্ষেত্রে রাজনীতিকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা। এখানেও তাই হচ্ছে। কিন্তু আমি চট্টগ্রামবাসীকে অভিনন্দন জানাতে চাই এই জন্য যে, তারা সকল রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাদের নগরীকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মতো দূষিত নগরীতে একটা প্রাকৃতিক সবুজের আধারকে ধ্বংস করে কোনো স্থাপনা হওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এটি মহাপরিকল্পনায় হেরিটেজ ও উদ্যান হিসেবে চিহ্নিত। এ রকম উন্মুক্ত উদ্যান ধ্বংস করে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এখানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। এর কোনো আইনগত ভিত্তি থাকতে পারে না।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিআরবি আমাদের রক্ষা করতেই হবে। রাজনৈতিক সরকারকে তার ন্যূনতম জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে গেলে জনগণের মতের বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করব প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে এই বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন নেই কাজেই এখন বিষয়টি আদালতে জানানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা প্রথমে একটা চিঠি দিয়েছিলাম, এখন আমি নিজের চোখে দেখে গেলাম। এখন আরও জোরালো করে যুক্তিগুলো তুলে ধরে আবার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদেরকে নোটিশ দেব। তাদের বলব তারা যেন এই প্রকল্পের ধারণা থেকে সরে আসে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকারের সকল সেবা সংস্থা সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিআরবিতে যে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা চট্টগ্রামবাসী প্রতিরোধ করতে ইতিমধ্যেই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। যা বিগত ৯ মাস ধরে চলমান আছে। আমরা পরিবেশ আইনবিদ সমিতির বেলার পক্ষ থেকে এই আন্দোলনের শুরু থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে রেখেছি। ইউনাইটেড হাসপাতাল নামে যে প্রাইভেট হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে এই ধরনের হাসপাতাল চট্টগ্রামে অনেক রয়েছে। কিন্তু জনগণের সম্পত্তি বিধি বহির্ভূতভাবে ইজারা দিয়ে যে প্রাইভেট হাসপাতালটি কি আদৌ সর্বসাধারণের কোন কল্যাণে আসবে? সরকার চাইলে যে কোন স্থানে হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু পাবলিক স্বার্থ জড়িত আছে এইরকম স্থানে আইন ভঙ্গ করে এবং প্রচলিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে এই হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে না।
পরে তিনি শহীদ আব্দুর রব সমাধি এবং পুরো সিআরবি এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় সিনিয়র সাংবাদিক আলীউর রহমান, বেলা চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান কল্লোল, ফারমিন ইলাহী ইরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএম/আইএসএইচ