শখের গাড়িতেই প্রাণ গেল রিজভী সাকিবের
রিজভী সাকিব। অনেকদিন ধরে পাঠাও-এ রাইড শেয়ারিংয়ে গাড়ি চালিয়ে এবং সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল সেট বিক্রি করে টাকা জমিয়েছেন। সে টাকায় দেড় মাস আগে কেনেন নীল রঙের কার। আজ সেই শখের গাড়িতে প্রাণ গেল তার।
চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানা এলাকার ফারুক হাসানের ছেলে সাকিব। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মেজো। সোমবার (২১ মার্চ) নিজের জমানো টাকায় দেড় মাস আগে কেনা গাড়িতে বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন সাকিব। পথে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগরে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান সাকিবসহ পাঁচজন।
সাকিবের বাবা ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছুদিন আগে মহসিন কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করেন সাকিব। সামনে এমএবিতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
রোববার (২০ মার্চ) রাত ৯টা ৫১ মিনিটের দিকে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, রাতে আমি একটি মিটিংয়ে ছিলাম। এমন সময় ছেলে ফোন দিয়ে বিকাশে টাকা চেয়েছিল। ওই সময় আমার কাছে তেমন টাকা ছিল না। যা ছিল তাই দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, বাসায় পৌঁছে টাকা দেব। তারপর আর কোনো কথা হয়নি। সকালে আমার ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনি। গাড়িতে বাকি যারা ছিল তাদের সঙ্গে পরিচয় নেই বলে জানান ফারুক।
তিনি বলেন, প্রাইভেট কারটি সাকিবের। সে নিজে পাঠাও চালাতো, সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল বিক্রি করত। এভাবে টাকা জমিয়ে দেড় মাস আগে কারটা কিনেছিল। গাড়িটি সে নিজেই চালাত। অনেক শখ করে গাড়িটি কেনে। সেই গাড়িতেই মারা গেল আমার ছেলে... এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফারুক হাসান।
রিজভী সাকিবের মরদেহ বাড়িতে আনতে ঘটনাস্থলে যান তার ভাই ও চাচা। ফারুক হাসানসহ স্বজনরা অপেক্ষা করছেন বাড়িতে শেষ বারের মতো ছেলের মুখ দেখতে।
আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগরে ট্রাক ও প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে চার জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রিজভী সাকিব (২৪), হারুনুর রশিদ (৩০), সাইদুল (৩৩), ও সাদমান। বাকি একজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাক ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। বাকি একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে আনা হয়েছিল। সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
প্রাইভেট কারটি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল। নিহতরা সবাই প্রাইভেট কারের যাত্রী ছিলেন।
কেএম/এমএইচএস/জেএস