সব হারিয়ে ঠাঁই হলো খোলা আকাশের নিচে
তিন সন্তানকে নিয়ে সুমন ও আয়েশার সংসার। সুমন রিকশাচালক, আয়েশা গৃহিণী। জীবনের তাগিদে রিকশার প্যাডেলে পা চালাচ্ছিলেন সুমন, ঠিক তখনই পেলেন আগুন লাগার খবর। ফিরে এসে দেখেন সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাদের এখন ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
রোববার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর কল্যাণপুর নতুনবাজার বেলতলা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পর সুমন ও আয়েশাকে আহাজারি করতে দেখেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক। তারা জানান, ঘরে থাকা টিভি, খাট, আসবাবপত্র, হাড়িপাতিল সব পুড়ে গেছে। কিছুই বের করতে পারেননি।
তাদের মতো খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধ আলী মিয়ার (৮০)। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। নয় বছর ধরে এ বস্তিতে থাকেন। মোট ছয়টি ঘর ছিল তার। নিজে এক ঘরে থাকতেন। বাকি ঘরগুলো ভাড়া দেওয়া ছিল। আগে রঙের কাজ করতেন। এখন কিছুই করতে পারেন না। ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে যা পেতেন তা দিয়ে ভালোই চলছিল তার। সর্বনাশা আগুনে এখন তিনি নিঃস্ব। বাকি জীবন কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে আহাজারি করতে দেখা যায় এ বৃদ্ধকে।
প্রথম পাঁচ বছর বস্তিতে ভাড়া ছিলেন শাজাহান মোল্লা (৬৪)। ১৫ বছর আগে এখানে একটা ঘর কেনেন। সেখানেই থাকতেন। গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে। ২০০৪ সালে এক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হন শাজাহান। ছয় মেয়ে। পাঁচ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়েকে নিয়ে এখন তার সংসার। মসজিদেই তার বেশির ভাগ সময় কাটে। যখন আগুন লাগে তখনও তিনি দারুসসালাম মেইন রোডের মসজিদে ছিলেন। এশার নামাজ শেষে বস্তিতে ফিরে শোনেন আগুনের খবর।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ঘর পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ হয়নি। চারদিকে ততক্ষণে আগুন আর আগুন। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। মেয়েকে নিয়ে এখন কোথায় উঠব— প্রশ্ন রাখেন এ প্রতিবেদকের কাছে।
রাজধানীর কল্যাণপুর নতুনবাজার বেলতলা বস্তিতে রোববার রাত ৯টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় ১৫০ থেকে ২০০টি কাঁচাঘর।
জেইউ/এসএসএইচ