বস্তির আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছেন লিটন-শাহজাহানরা
রাজধানীর কল্যাণপুর নতুনবাজার বেলতলা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় বস্তিতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু এরই মধ্যে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন শতাধিক বস্তিবাসী।
কঠোর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা এসব বস্তিবাসী সামান্য মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়ে তুলেছিলেন এ বস্তিতে। এক নিমিষেই তা যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো। সবকিছু হারিয়ে পোড়া গন্ধের মধ্যে বসে বিলাপ করছিলেন কেউ কেউ। ১০০ থেকে ১৫০টির মতো ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে— দাবি তাদের। রোববার (২০ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন বস্তিবাসীর।
মো. লিটন, কল্যাণপুরের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। বগুড়ার বাসিন্দা লিটন গত ১০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে দুই হাজার টাকা ভাড়ায় বস্তির একটি ঘরে থাকতেন। কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তিলে তিলে সেখানে গড়ে তুলেছিলেন সুখের সংসার। কিন্তু আজ সব শেষ হয়ে গেছে। সর্বনাশা আগুন তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।
লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গার্মেন্টস থেকে রাত ৯টায় বস্তিতে আসি। এসে দেখি আগুনে সবকিছু জ্বলছে। আগুনের তাপ এত বেশি ছিল যে নিজের ঘরের কাছেই যেতে পারিনি। সন্তানরা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। ঘর ফাঁকা ছিল। কিছুই বের করতে পারিনি। গত ১০ বছর ধরে একটা একটা করে জিনিস কিনে সংসার সাজিয়েছিলাম। আজ আগুনে সব ছাই হয়ে গেছে। নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করতে হবে। কীভাবে করব, মাথায় আসছে না।
বৃদ্ধ শাহজাহান মোল্লা দারুস সালামের একটি মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে এসে দেখেন দাউ দাউ করে জ্বলছে পুরো বস্তি। বস্তির সঙ্গে পুড়েছে নিজের ঘরও। চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে ছাই হতে দেখেছেন। কিছুই করতে পারেননি তিনি।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এশার নামাজ পড়ে এসে দেখি ঘরে আগুন লেগেছে। পরিবারের সদস্যরা কোনোমতে জীবন নিয়ে বাইরে আসতে পেরেছে। কিন্তু কোনো জিনিসপত্র তারা বের করে আনতে পারেনি।
‘ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আগুনের এত তাপ ছিল যে কাছেই যেতে পারিনি। চোখের সামনে পুরো সংসারই শেষ হয়ে গেল। এখন আমি রাস্তায় নেমে গেছি। এ বয়সে এসে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করা সম্ভব নয়’— বলেন শাহজাহান মোল্লা।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত— জানতে চাইলে এক প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা পোস্টকে জানান, শাহ আলমের দোতলা বাসা থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তে তা সারা বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ১০০ থেকে ১৫০টি ঘর পুড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের গাফিলতির বিষয়টিও তুলে ধরেন কেউ কেউ। তারা জানান, যে ঘরগুলোতে আগে আগুন লেগেছে সেখানে তারা পানি দিচ্ছিল। নতুন করে আগুন লাগা ঘরগুলোতে তারা পানি দেয়নি। সময়মতো সেখানে পানি দিলে কিছু ঘর রক্ষা করা যেত। তাদের কাছে পানির পাইপও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা দেয়নি। দিলে বস্তিবাসীরা কিছু ঘর রক্ষা করতে পারত।
রোববার (২০ মার্চ) রাত ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বস্তিতে আগুন লাগার খবর পান। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
জেইউ/এমএসি/এসএসএইচ