হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু রহস্য, ডিএনএ টেস্টের চিঠি পায়নি সিআইডি
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে তার পরিবার থেকে যে দাবি করা হচ্ছে এর পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে চলতি মাসে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার একটি প্রতিবেদন নিয়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন এ কথা সত্য হলেও গত ১৪ বছর তিনি মাহমুদুর রহমান নাম নিয়ে ঢাকাতেই বাস করছিলেন।
এখন মাহমুদুর রহমান নামে যে ব্যক্তির মৃত্যুর হয়েছে তিনিই হারিছ চৌধুরী কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিয়া চৌধুরীর দাবি মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী। পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে সামিয়া চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
ওই চিঠিতে সামিরা নিজেকে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, তার বাবার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে তিনি চিঠিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার বাবার ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিজের সম্মতির কথা জানিয়েছেন।
তিনি চিঠিতে আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্ত করতে কোনো উদ্যোগ নেয়, তাহলে তাতে তার কোনো আপত্তি নেই।
সামিরা চৌধুরীর কোনো চিঠি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পায়নি। তবে সিআইডি বলছে, হারিছ চৌধুরী পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) দুপুরে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে বলে কথাটি ঢাকা পোস্টকে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও সিআইডির প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, চিঠিটির কথা আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কিন্তু চিঠিটি আমাদের হাতে এখনও পৌঁছায়নি। হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্তকরণে ডিএনএ পরীক্ষার করাতে হলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ডিএনএ অ্যাক্টও অনুসরণ করতে হয়। এছাড়া কোনো মৃত ব্যক্তির মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে।
এদিকে সিআইডি সূত্রে জানা যায়, হারিছ চৌধুরীর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে এ ব্যাপারে সিআইডি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর সামনে আসে। ১২ জানুয়ারি হারিছ চৌধুরীর চাচাচো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয়েছে হারিছ চৌধুরীর।
তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন। আগস্ট মাসে হারিছ চৌধুরী লন্ডনে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন। করোনার ধকল সাময়িক কাটিয়ে উঠলেও তার ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ায় ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে আবারও তার পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সে সময় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদটি তার মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ফোনে দেশে জানিয়েছিলেন বলে জানান আশিক চৌধুরী।
যদিও ১৫ জানুয়ারি মানবজমিন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। সামিরা চৌধুরীকে উদ্বৃত করে তারা প্রতিবেদনটি করেছিল।
পরবর্তীতে মার্চ মানবজমিন পত্রিকায় ‘হারিছ নয়, মাহমুদুর রহমান মারা গেছেন’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবি করা হয়, ‘হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ ১৪ বছর দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি তার নাম-পরিচয় বদল করেন। নতুন নাম নেন ‘মাহমুদুর রহমান’। এই নামেই তিনি নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় ১১ বছর ঢাকার পান্থপথে ছিলেন। নিজেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বলে পরিচয় দিতেন। ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর পর তাকে সাভারে দাফন করা হয়।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর ৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার একজন আসামি তিনি।
এমএসি/এসকেডি/এনএফ