৩৭ বছর পর ডিডিটি অপসারণ শুরু
প্রায় ৩৭ বছর পর বাংলাদেশ থেকে অপসারণ হচ্ছে ম্যালেরিয়া জীবাণু নিধনে পাকিস্তান থেকে আনা ডাইক্লোরো ডাফেনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন (ডিডিটি)। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের সাব গোডাউনে পড়ে থাকা প্রায় ৫২৪ টন বিষাক্ত ডিডিটি বাংলাদেশ থেকে বিশেষ কনটেইনারে জাহাজে করে ফ্রান্সে নিয়ে ধ্বংস করা হবে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নগরীর আগ্রাবাদে সরকারি মেডিকেল সাব ডিপোতে আয়োজিত অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। ডিউটি সরানোর কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন (এফএও) এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন মেনেই অপসারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ডিডিটি রাসায়নিক মশা নিধন ছাড়া কোনো কাজে আসেনি। এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এটি কোনোভাবেই নষ্ট হয় না, অপরিবর্তিত থেকে যায়। একসময় চট্টগ্রামের ভাটিয়ারির বারবকুন্ডে ডিডিটি উৎপাদনের একটি কারখানা ছিল। সেখানে ৩৫ বছর আগে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের আর কোথাও এই ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই। এখন শুধু এই ডিপোতেই মজুদ রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে এগুলো ধ্বংস করার কোনো যন্ত্রপাতি নেই। তাই এগুলো ধ্বংস করা যাবে না। এ অবস্থায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন (এফএও) এগিয়ে এসেছে। তারা সেগুলো ফ্রান্সে নিয়ে ধ্বংস করবে।
তিনি আরো বলেন, এগুলো বিশেষভাবে প্যাকেজিং করা হচ্ছে। বিশেষ কন্টেইনারে করে জাহাজের মাধ্যমে ফ্রান্সের একটি কারখানায় পাঠানো হবে। খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করতে আন্তর্জাতিক মান ও নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে।
মোস্তফা কামাল বলেন, এসব ডিডিটি পাউডার অপসারণের সম্পূর্ণ খরচ দিচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থা গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে সরকার ম্যালেরিয়া নির্মূলে মশক নিধনের উদ্দেশ্যে প্রায় ৫০০ টন ডিডিটি পাকিস্তান হতে আমদানি করে। কিন্তু এরপর থেকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের গোডাউনে তা মজুদ রয়েছে। পরবর্তীতে দেশের আরো বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু ডিডিটি এখানে এনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৫২৪ টন ডিডিটি রয়েছে। তবে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বিবেচনায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও ১৯৮৯ সালে ডিডিটির উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
২০০১ সালে স্টকহোম কনভেনশনে ডিডিটিসহ ক্ষতিকারক জৈব দূষণকারী কীটনাশক উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ বা সীমিতকরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে বাংলাদেশেসহ ১৭১টি দেশ স্বাক্ষর করে।
সম্প্রতি সরকার ডিডিটি পরিবেশ সম্মতভাবে অপসারণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের পরিচালক ফরিদ আহমেদ।
তিনি বলেন, এপ্রিলের মধ্যে সব ডিডিটি প্যাকেট করে কনটেইনারে তোলার কাজ শেষ হবে বলে আশা করি। এরপর ধাপে ধাপে জাহাজে করে এগুলো ফ্রান্সে পাঠানো হবে। এগুলো পাঠানোর সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে পরিবেশের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়। সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ডিডিটি অপসারণ করে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে জলপথে জাহাজের মাধ্যমে বিশেষ কনটেইনারে এসব রাসায়নিক নিয়ে যাওয়া হবে। পথে ১২টি দেশের বন্দর হয়ে শেষ গন্তব্য ফ্রান্সে পৌঁছাবে ওই জাহাজ। এসব বন্দরের অনুমতি নেওয়া প্রায় শেষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্যাকিংয়ের সময় কন্টেইনারে উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের বিশেষ পোশাকসহ অপসারণের সময় নির্দিষ্ট এলাকা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এই পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। অপসারণের পুরো টাকা দিচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থা জিইএফ। তারা এটা অনুদান হিসেবে দিচ্ছে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজন্টেটিভ রবার্ট ডি সিম্পসন।
কেএম/ওএফ