সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব কেন, জানতে চান তথ্যমন্ত্রী
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকসহ চার সংগঠনের ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব কেন তলব করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, সাংবাদিক নেতাদের যে ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে সেটা আপনাদের মতো আমিও পত্রিকার পাতায় দেখেছি। আমিও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এটা কেন হলো সেটা আমার বড় প্রশ্ন।
আজ (বৃহস্পতিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এ প্রশ্ন করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার অবশ্যই যে কারো ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব তলব করতেই পারে। এমডিদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়, রাজনৈতিক নেতাদের তলব করা হয় আবার ব্যবসায়ীদেরও তলব করা হয়। কিন্তু কেন করা হলো এটা আমার কাছে বড় প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। যে সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে তাদের আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি এবং চিনি। তাদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কেও আমার জানা আছে। তাদের উদ্বেগের কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। যাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে তারা হয়তো পরবর্তীতে বুঝতে পারবেন কেন তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের শৃঙ্খলার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে যে ধরনের বিশৃঙ্খলা ছিল আপনাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে, শৃঙ্খলা আনার জন্য চেষ্টা করে আসছি। প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলোকে প্রতি মাসে কেবল অপারেটরদের কাছে ধর্না দিতে হতো। তাদের টিভি চ্যানেলের সিরিয়াল ঠিক রাখার জন্য। ক্যাবল অপারেটরদের টাকা দিলে সিরিয়াল ওপরের দিকে থাকতো। টাকা না দিলে ভারতীয় চ্যানেলের পরে সিরিয়াল চলে যেত ৫০ এর উপরে। এই বিশৃঙ্খলা প্রায় বিশ বছর ছিল। আমাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পরে আপনাদের সহযোগিতায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে এখন আর কেবল অপারেটরদের কাছে ধর্না দিতে হয় না।
তিনি বলেন, ১ অক্টোবর থেকে বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন যেন বাংলাদেশে সম্প্রচার করতে না পারে সেজন্য দেশের প্রচলিত আইন কার্যকর করতে যাচ্ছি। দেশে অনেকগুলো আইপিটিভি কাজ করছে। খুব সহসাই আইপিটিভি রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করবো। গত দুই বছরে ৪০০ পত্রিকার একটি সংখ্যাও ডিএফপিতে জমা দেওয়া হয়নি। সেখান থেকে ১২০টি পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে। এই পত্রিকাগুলো বের হয় না কিন্তু বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় দৌড়াদৌড়ি করে। বিজ্ঞাপন পেলে সেদিন ছাপায়। এতে করে যে পত্রিকাগুলো সত্যিকার অর্থে প্রকাশিত হয় তারা বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হন। বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হওয়ার কারণে সেসব পত্রিকার সাংবাদিকরা বেতন পায় না। সাংবাদিক নেতাদের সহায়তায় এসব বিশৃঙ্খলা বন্ধের চেষ্টা করছি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংবাদিক সদস্যরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা জিজ্ঞাস করলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেশের মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যমে হয়রানি এবং অপদস্থ হয়ে থাকে তাহলে সে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে আইনি সহয়তা পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম উন্নয়নশীল বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অধিক স্বাধীন। দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োজন রয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে অনেকের না বলা কথা সামনে আসে। তবে অনেকেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে কারো কারো ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নষ্ট করেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে বার্ষিক সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু প্রমুখ।
এমএইচএন/এনএফ