সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় সংবিধান ও আইন সংশোধনের সুপারিশ

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ ও সাংবাদিকতা সংক্রান্ত ফৌজদারি মানহানি আইন, আদালত অবমাননা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২২ মার্চ) যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের সংশোধন প্রয়োজন যাতে, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে যুক্তিসংগত বিধিনিষেধের বিষয়টি শুধু যুদ্ধাবস্থায় প্রযোজ্য হবে।
বিজ্ঞাপন
সাংবাদিকতার স্বাধীনতার বিষয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সংবিধানে আলাদা ও সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। যেমন- সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা এবং সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন না করার অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুইডেনের সংবিধানেও ফ্রিডম অব প্রেসের অনুরূপ গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানেও সুইজারল্যান্ডের সংবিধানের মতো সাংবাদিকতার স্বাধীনতার গ্যারান্টির প্রশ্নটি সুনির্দিষ্টভাবে ও বিশদে লিপিবদ্ধ করা সমীচীন।
ফৌজদারি মানহানি
বিজ্ঞাপন
ফৌজদারি মানহানির সব আইন, যেমন- ১৮৬০ সালের বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৫০০, ৫০১ এবং ৫০২ ধারা এবং ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারা বাতিল করা উচিত। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের মানহানি সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কমিশনের ওপর প্রদান করার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ সালের ৯৯ক এবং ৯৯খ ধারায় সরকারকে সংবাদপত্র বাজেয়াপ্ত করার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের (আইসিসিপিআর) পরিপন্থি। অতএব তা বাতিল করা উচিত।
সাইবার নিরাপত্তা আইন
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের যেসব বিধান নিয়ে সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের উদ্বেগ রয়েছে, তা নিরসন করতে হবে।
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩
৫ ধারা সংশোধন করে কেবল জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া উচিত এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য জনস্বার্থের প্রশ্নে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা সংযোজন করা উচিত।
আদালত অবমাননা আইন
ক. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (ICCPR) এর ১৪ অনুচ্ছেদের অধীনে ন্যায়বিচারের অধিকার এবং নির্দোষিতার স্বীকৃতি রক্ষার জন্য ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
খ. ২০১৩ সালের আদালত অবমাননা আইন (যা ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন বাতিল করেছিল এবং 'আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা' অপরাধ পুনরায় প্রবর্তন করেছিল) বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা ২০২৩ সালের ১২৩৪ নং দেওয়ানি আপিলের দ্রুত শুনানির জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সংক্রান্ত আইন
দণ্ডবিধির ২৯৫ক এবং ২৯৮ ধারা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা বাতিল করা উচিত।
তথ্য অধিকার আইন
তথ্য অধিকার আইনের ৭ নং ধারা সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতি রেখে ICCPR-এর ১৪, ১৯ এবং ২০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী করা উচিত, যাতে তথ্যাদি প্রকাশনার ফলে বিচারকার্য, জাতীয় নিরাপত্তা বা কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়। কিন্তু জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশ করা অত্যাবশ্যক হলে এ বাধাগুলো অতিক্রম করার জন্য একটি 'ব্যতিক্রম (Exception)'-এর বিধান থাকা উচিত হবে।
এমএইচডি/জেডএস